ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আল্লা আমারে তুইল্যা নাও’

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
‘আল্লা আমারে তুইল্যা নাও’

‘আল্লা আমারে তুইল্যা নাও। আর পারছি না। শরীরটা জ্বইল্যা গেলো রে’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এভাবেই আহাজারি করছিলেন সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানায় আগুনে দগ্ধ শ্রমিক নাজমা (১৭)।

ঢাকা: ‘আল্লা আমারে তুইল্যা নাও। আর পারছি না।

শরীরটা জ্বইল্যা গেলো রে’। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এভাবেই আহাজারি করছিলেন সাভারের আশুলিয়ায় গ্যাস লাইটার কারখানায় আগুনে দগ্ধ শ্রমিক নাজমা (১৭)।
 
নাজমার বেডের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সান্তনা দিচ্ছেন ভগ্নিপতি আশরাফুল। কিন্তু নাজমাকে সান্তনা দিতে গিয়ে নিজেই হাউমাউ করে কেঁদে বললেন, এভাবে আর পারছি না। এর চেয়ে মরে যাওয়াও ভালো। এই বিভৎসতা সহ্য করা যায় না।
 
‘বোনডা আমার গ্যাস লাইটারের মাথা লাগানোর কাজ করতো। প্রতিদিনের মতো সেদিনও কাজে গিয়েছিলো। কিন্তু সেদিন আর বোনডা আমার বাড়িতে যায়নি। পরে লোকমুখে শুনতে পেলাম কারখানায় আগুন লেগেছে। কারখানার সামনে গিয়ে জানতে পারি তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়েছে। ’
 
শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে জানা যায়, বর্তমানে লাইটার কারখানায় দগ্ধ ১৮ জন নারী শ্রমিক চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের মধ্যে ৪ জন আইসিইউতে, এইচডিইউ’তে (হাইডিপেনডেন্সি ইউনিট) ৪ জন, অবজারভেশন ওয়ার্ডে ৪ জন ও পোস্ট অপারেটিভ বিভাগে আছেন ৬ জন।
 
হাসপাতালের বেডে কথা হয় অগ্নিদগ্ধ শ্রমিক নাজমা আক্তারের (১৭) সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কারখানায় তিনি গ্যাস লাইটারের মাথা লাগানোর কাজ করতেন।   আর যে রুমে তারা কাজ করতেন সেই রুমের সামনে একটি কেচিগেট ছিলো। কারখানায় যখন আগুন লাগে ঠিক সেই মুহূর্তে কারা যেন গেটটি বন্ধ করে দেন। রুম থেকে বের হতে গিয়ে তারা একে অন্যের ওপর উপড়ে পড়েন।
 
তিনি আরো বলেন, যদি রুমের সামনে গেটটা না থাকতো তাহলে তাদের ক্ষতি কম হতো। আর তারা অগ্নিদগ্ধের শিকারও হতে না।
 
নাজমার ভগ্নিপতি আশরাফুল ইসলাম অশ্রুসিক্ত হয়ে বাংলানিউজকে বলেন, নাজমার শরীরের শ্বাসনালীসহ প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
 
ঘটনার দিন সকালে বোনডা আমারে কইলো ভাই অফিসে যাচ্ছি।    সন্ধ্যায় এসে মার্কেটে যাবে। কিন্তু এর মধ্যেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। অন্যদিকে কারখানার পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে তাদের দাবি, অর্থ নয় যেভাবেই হোক দ্রুত নাজমাকে সুস্থ করে তোলার ব্যবস্থা করা হোক।   সরকারকে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধও জানান তিনি।
 
কারখানায় অগ্নিদগ্ধ হওয়া মেহেরার ভাই জহিরুল সরকার বলেন, আমার বোনের শ্বাস নালীসহ শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। সেগুলোর রিপোর্ট শনিবার (২৬ নভেম্বর) পাওয়া যাবে। আর তখনই ডাক্তার বলতে পারবেন, মেহেরার কি অবস্থা, সুস্থ হতেই বা কতোদিন লাগবে।
 
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢামেকে ভর্তি হওয়া ২০ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে আঁখি  ও রোকসানা আক্তার রকির।
 
আশুলিয়ায় কারখানায় অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার অগ্রগতির বিষয়ে ঢামেকের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর বাংলানিউজকে বলেন, চিকিৎসায় আমরা আমাদের দিক থেকে কোনো ধরনের ত্রুটি রাখছি না। তবে বেশিরভাগেরই শ্বাসনালীসহ শরীরের ২০ শতাংশ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ফলে তাদের সুস্থ হতে সময় লাগবে। আর অগ্নিদগ্ধদের সুস্থ করে তুলতে তারাও আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
 
গত মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধসহ আহত হন মোট ৩৯ জন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
এসজে/জেডএস

**
ঢামেক বার্ন ইউনিট জুড়ে আশুলিয়ায় দগ্ধদের আর্তনাদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।