ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের জন্য হাসপাতালের বারান্দায় আয়েশা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
মৃত্যু পথযাত্রী মায়ের জন্য হাসপাতালের বারান্দায় আয়েশা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আয়েশা সিদ্দিকী। বয়স দুই-কি আড়াই বছর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) দরজার পাশেই শুয়ে আছে। মৃত্যু পথযাত্রী মা সখিনা বেগমের (১৮) সুস্থতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
ছোট্ট শিশুটি জানেও না- মায়ের কি হয়েছে।

ঢাকা: আয়েশা সিদ্দিকী। বয়স দুই-কি আড়াই বছর।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) দরজার পাশেই শুয়ে আছে। মৃত্যু পথযাত্রী মা সখিনা বেগমের (১৮) সুস্থতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
ছোট্ট শিশুটি জানেও না- মায়ের কি হয়েছে। একটু পরপর শুধু কাঁদছে, আর চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকছে।

গত মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড নামে গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছেন সখিনা বেগম।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রফিকুল ইসলামের মেয়ে সখিনা। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় একই এলাকার আঙ্গুর মিয়ার সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। গত চৈত্র মাসে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আয়েশাকে নিয়ে বাবার বাড়িতেই ঠাঁই নিয়েছিলেন সখিনা।

দিনমজুর বাবার সংসারে টানাপোড়েন। তাই গেলো ভাদ্র মাসে আয়েশাকে বাবার কাছে রেখে আশুলিয়ার ওই কারখানায় কাজ নেন সখিনা।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস! মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে তার শ্বাসনালী থেকে শুরু করে শরীরের বেশিভাগ অংশই পুড়ে যায়। বর্তমানে ঢামেকের আইসিইউতে মৃত্যুর সংঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

সখিনার দগ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে নাতনি আয়েশাকে নিয়ে ছুটে এসেছেন রকিবুল। স্ত্রীকে নিয়ে উদভ্রান্তের মতো পায়চারি করছেন হাসপাতালের বারান্দায়। মাঝে মাঝে আয়েশার চোখ মুছে দিচ্ছেন।

রকিবুল বাংলানিউজকে বলেন, ডাক্তাররা সব সময় সেবা করছেন। চিকিৎস‍া বোধ হয় ভালো হচ্ছে। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) কথা বলেছেন সখিনা।

ইতোমধ্যে সরকারের তরফ থেকে ৪৫ হাজার টাকা সহায়তাও পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত চিকিৎসা বাবদ কোনো ব্যয় হয়নি।

তারপরও রকিবুলের চিন্তার শেষ নেই! তার অভাবের সংসারে বড় মেয়েটি ছোট থেকেই প্রতিবন্ধী। ছোট সখিনারও যদি কিছু হয়ে যায়, তবে নাতনিকে নিয়ে অথৈ জলে পড়বেন তিনি। বলেন, ‘মুই কি দুশ করিয়াছি! মোর কপালোত ইঙ্কা হইলো’।

কারখানার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৬ জন দগ্ধসহ আহত হয়েছিলেন মোট ৩৯ জন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু শ্রমিকসহ ২০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এদের মধ্যে চারজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিলো। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে সখিনা ছাড়াও আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নেহেরা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৬
ইইউডি/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।