ঢাকা: স্মার্টফোনে ‘উবার’অ্যাপস থেকে পরিবহন সেবা দেওয়ার যে পদ্ধতি বিশ্বের দেশে দেশে এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা বাংলাদেশে চালু করার প্রক্রিয়া অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে চলেছে। চাইলেই হাতের কাছে গাড়ি মিলবে এই উবার অ্যাপসের ব্যবহারে, যা দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে ও নাগরিক সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলেই অনেকের বিশ্বাস।
তারা বলছেন, অনেক দেশে এরই মধ্যে এই সেবা তার গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোট অথরিটি (বিআরটিএ) এরই মধ্যে উবারকে বেআইনি ঘোষণা করেছে। কেবল তাই নয়, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। আর তাতে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিআরটিএর এ ধরণের সিদ্ধান্তকে জনবিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন, যেখানে সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উবারকে স্বাগত জানিয়েছেন সেখানে বিআরটিএ কিভাবে এটাকে অবৈধ বলে নোটিশ দেয়?
বিআরটিএ তাদের নোটিশটি সংবাদপত্রেই শুধু প্রকাশ করেনি সংস্থাটির নিজস্ব ফেসবুক পেইজেও দিয়েছে। সেখানেই পড়েছে অন্তত ৮৪ টি মন্তব্য। যার প্রায় সবগুলো মন্তব্যেই বিআরটিএর কড়া সমালোচনা দেখা গেছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে নাগরিকের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার যে উদ্যোগ তাকে স্বাগত জানাতেই হবে এমন মত দিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- উবারকে বেআইনী বলছে বিআরটিএ কিন্তু সরাসরি নিয়ম ভেঙ্গে অনেকে প্রতিষ্ঠান মোটরাসাইকেলে পণ্য আনা নেয়ার কাজও করছে তাদের ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা কেনো নেওয়া হচ্ছে না।
উবার সার্ভিসটি চালু হলে অনেক তরুণ বেকার এই স্মার্ট ড্রাইভিংয়ে উৎসাহী হবেন, আর তা বেকারত্ব দূর করবে বলেও মত দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা।
তারা বলেছেন, ফুডপান্ডা, ডিএইচএল, চালডালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এরকম সেবা এরই মধ্যে দিচ্ছে। খাবার সরবরাহ তাতে সহজ হয়েছে। উবার চালু হলে পরিবহনও সহজ হবে বলে মত তাদের।
এর আগে স্যাম নামে আরেকটি অ্যাপ মোটরবাইক শেয়ারিং পদ্ধতি নিয়ে এলে তখনও নোটিশ দিয়ে এটি বেআইনী বলা হয়েছিলো বলে উল্লেখ করেন একজন মন্তব্যকারী।
কেউ কেউ এও বলতে ছাড়েননি দুটি ট্যাক্সি সাভিসের ব্যবসা বাঁচাতে সহজ একটি পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিআরটিএ।
একজন লিখেছেন, ‘শেম অন বিআরটিএ, উই ওয়ান্ট উবার ইন ঢাকা’।
অপর একজন লিখেছেন, ‘উবার হলো কারো আন্ডারে না থেকে নিজের গাড়িকে ভাড়ায় চালানোর মত। অর্থাৎ আপনি স্বাধীনভাবে এই কাজটি করতে পারবেন।
কেউ কেউ ভারত ও অস্ট্রোলিয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, দেশ দুটি প্রথম উবার নিষিদ্ধ করলেও পরে দ্রুতই ভুল বুঝতে পারে এবং তা চালু করে দেয়।
আরেকজন লিখেছেন, ‘গায়ে জ্বালাতো উঠবেই। ট্যক্সিক্যাবের মালিক উনারাই। পয়সা পকেট থেকে খশে যাচ্ছে যে। আইন দিয়ে অন্য দেশে খারাপ কাজ আটকায় আর আমাদের দেশে ভালো কাজ আটকায়। ’
আরেকজন আহ্বান জানিয়েছেন ‘উবারের সেবাটি ঢাকার মানুষ চায়। তাই বন্ধ করে নয় উন্মুক্ত করে দিন তাদের সেবা। ’
আরেকজন লিখেছেন, আইন বদলান। জনগণের সুবিধার জন্য আইন, আইনের জন্য জনগণ নয়।
বিআরটিএক উদ্দেশ্যে করে আরেকজন লিখেছেন ‘আপনারা ঘুষ দিয়ে লাইসেন্স দেন সেটা কতটা আইনসম্মত’।
উবার সেবা তমা এবং ট্রাস্ট ক্যাবের চেয়ে সস্তা এ কারণেই ওদের ব্যবসা বাচানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে বিআরটিএ এই মত দিয়ে একজন বলেন, গত মাসে আমি নিউইয়র্কে ছিলাম । ওখানে দেখেছি কতাটা জনপ্রিয় এই উবার।
তবে আশার কথা হচ্ছে- স্মার্টফোন ভিত্তিক সেবাগুলোকে স্বাগত জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এগুলোকে একটি লিগ্যাল ফ্রেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, এসব সেবাকে পজেটিভ ভাবে দেখা হচ্ছে।
শনিবার (২৬) সকালে রাজধানীর বনানীতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ক্যাম্পেইনে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৬
এসএ/এমএমকে
**অ্যাপসে ‘ক্যাব-বাইক’ সেবাদাতাদের সঙ্গে বসতে চায় বিআরটিএ
** স্মার্টফোন ভিত্তিক সেবাগুলোকে লিগ্যাল ফ্রেমে আসতে হবে