ঢাকা: মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পে গত দুই বছর তিন মাসে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৭৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। একে হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে কাজের ধীরগতির ব্যাখ্যা চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্ত কমিটি।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)।
৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায় ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। ২০২৩ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে মাতারবাড়ি প্রকল্পের ত্রুটি-বিচ্যুতি পেশ করেছে আইএমইডি। প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণও আগামী একমাসের মধ্যে আইএমইডি’তে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইএমইডি’র প্রধান শেখ নজরুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক আবুল হাশেমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। নভেম্বর মাসে প্রতিবেদন তৈরি করে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সিপিজিসিবিএল’র কাছে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ব্যাখ্যা চেয়েছে আইএমইডি।
আইএমইডি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাতারবাড়ি প্রকল্পটি পরিদর্শন করে আমরা কিছু সুপারিশও দিয়েছি সিপিজিসিবিএলকে। প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধে মিটিগেশন মেজার্স নিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ধোঁয়া চিমনির উচ্চতা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময় মাথায় রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে যেতে বলা হয়েছে’।
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, প্রকল্প এলাকায় কোনো স্থায়ী জেটি না থাকায় কর্মরতদেরকে যথেষ্ট ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত স্থায়ী জেটি নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে, যেন প্রকল্প এলাকার মালামাল অবতরণ ও পরিবহন সহজতর হয়।
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ১ হাজার ৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের অধিগ্রহণকৃত জমির সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের ক্লিয়ারেন্সও পাওয়া গেছে। প্রকল্পের কাছে বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসন কাজ চলমান আছে। তবে মাতারবাড়ি ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র।
কিন্তু মূল কেন্দ্রের মেকানিক্যাল, পূর্ত, স্থায়ী টাউন শিপ নির্মাণ ও আবাসিক কাজের তেমন একটা অগ্রগতি নেই। এমনকি প্রকল্প এলাকা লেভেলিং ও অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ পিছিয়ে আছে। ফ্লু গ্যাস ডি সালফারাইজেশন ইউনিট স্থাপনের কাজও শুরু হয়নি।
ফলে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রথম পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে জানায় আইএমইডি।
সিপিজিসিবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পের মূল কাজসহ অনেক কাজই এখনও শুরু হয়নি। এর প্রধান কারণ, আমরা এখনও প্রধান ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারিনি। যে কারণে দুই বছর তিন মাসে প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৫৭৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ১ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে মূল ঠিকাদার নিয়োগ করতে পারলে প্রকল্পের অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর