খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনুমোদন না নিয়েই প্রতিষ্ঠিত ও কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করে চলছে অনেক ইটভাটা।
এসব ভাটায় ইট তৈরির জন্য জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ফসলি জমি ও পাহাড়ের উর্বর মাটি এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বন-জঙ্গলের মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
২০০৩ সাল থেকেই খাগড়াছড়ির সব ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ থাকলেও, বন্ধ নেই ইট পোড়ানোর কাজ। এভাবেই চলছে জেলার ২৬টি ভাটা। এতে করে বন উজাড় ও মাটিক্ষয়ের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সূত্রমতে, ইটভাটায় জ্বালানির জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন বন-জঙ্গল থেকে প্রচুর পরিমাণে গাছ কেটে মজুদ করা হচ্ছে। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী লাইসেন্স না নিয়ে ভাটা চালানো হলে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। এছাড়া ইট তৈরির জন্য কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা, পুকুর, খাল থেকে মাটি কেটে নিলেও জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
কিন্তু বাস্তব অর্থে এসব আইনের কোনো ধারাই মানা হচ্ছে না খাগড়াছড়ির ইটভাটার ক্ষেত্রে। প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে চলছে এসব ভাটা। বিভিন্ন সময় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানালেও দৃশ্যমান ও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, ইট তৈরির জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৬ মাসের চুক্তিতে শ্রমিক আনা হয়েছে। যারা মাটি কাটা থেকে শুরু করে ইট তৈরি ও আগুন পুড়িয়ে তা বিক্রয়যোগ্য করছেন।
ইট তৈরির জন্য বিভিন্ন ফসলি জমি ও পাহাড়ি এলাকা থেকে মাটি আনা হচ্ছে। আর ইট পোড়ানোর জন্য আনা হচ্ছে বনাঞ্চলের গাছ।
এসব বিষয়ে খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, ‘মাটির উপরের অংশ হচ্ছে জমির প্রাণ। বিভিন্ন ফলন উৎপাদন হয় জমির উপরের উর্বর অংশ থেকে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জমির উপরের অংশটুকু ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য কেটে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইট তৈরির জ্বালানিতে ব্যবহারের জন্য নানা জাতের গাছ কেটে মজুদ করা হচ্ছে। ফলে স্থানীয় পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ’
জানতে চাইলে খাগড়াছড়ির ব্রিক ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম রাশেদ উদ্দিন বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে আমরা কিছুই করছি না। যারা পরিবেশবান্ধব ইটভাটা করছে না তাদের বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা শক্ত অবস্থান নেই। ’
তবে ইটভাটায় ধানি জমি, পাহাড় কাটা এবং নিবির্চারে গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত বৈঠক হবে। যারা নিয়ম মেনে ভাটা করছেন তাদের লাইসেন্স এবং অবৈধ ভাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
বিএসকে/এসআর