ঢাকা: গত এক বছর এবং চলতি বছরের অক্টোবর মিলিয়ে মোট ২২ মাসে ৯ হাজার ৬৩৬টি নারী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ ২২ মাসের সমানুপাতিক হারে চলতি বছর শেষে নারী সহিংসতার ঘটনা দাঁড়াতে পারে ১০ হাজার ৪৫৯ এ।
২০১৫ সালে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১৪টি দৈনিক এবং এ বছরের ১০ মাসে ১৩টি দৈনিক পত্রিকা থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র তুলে আনে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
রোববার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তৃতা করেন মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধর্ষণ, পারিবারিক নির্যাতন এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। ২০১৫ সালে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে ১ হাজার ৪৫৬ জন নারী সহিংসতার শিকার হন। আর এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এমন সহিংসতার ঘটনা ঘটে ১ হাজার ৩৩১টি।
প্রতিবেদন মতে, গত বছর ধর্ষিত হন ১ হাজার ৬৯ নারী। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এমন পাশবিকতার ঘটনা ঘটে ৮৬৭টি। গত বছর পরিবারে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ৯৯৬টি। এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরিবারে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটৈ ৬৯০। বাকি যেসব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে- যৌন হয়রানি, ফতোয়ার মাধ্যমে আঘাত, এসিড সন্ত্রাস, পাচার, অপহরণ, নিখোঁজ, যৌতুকের জন্য নিপীড়নসহ অন্যান্য নির্যাতন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এ বছর দ্বিগণ হারে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৪৮টি। আর এ বছর অক্টোবর পর্যন্ত এমন ঘটনা দাড়িয়েছে ৭৫-এ।
মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত নারীর প্রতি সহিংসতা সংক্রান্ত জরিপ ২০১৫ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে নিজের স্বামীর শারীরিক, মানসিক, যৌন কিংবা অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী মাত্র ২৩ শতাংশ নারী তার নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন এবং মাত্র ৩ শতাংশ নারী আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করেন।
অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, পত্র-পত্রিকায় যেসব ঘটনা আসছে তার থেকেও বেশি নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। যা আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। এ থেকেই ধারণা পাওয়া যায়, এ ধরনের সহিংতার পর্যায় কতোটা ভয়াবহ।
এ বিষয়ে আর চুপ থাকার সুযোগ নেই উল্লেখ করে সালমা আলী বলেন, সহিংসতার ফলাফল সবসময়ই নীতিবাচক। তাই প্রতিকার ব্যবস্থার চেয়ে বেশি প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে সালমা আলী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সর্বস্তরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, সহিংসতা প্রতিরোধ কার্যক্রমে পুরুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গৃহীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক তৌহিদা খন্দকার, ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট ফিরোজা পারভীন, সহকারী পরিচালক রাশিদা হোসেন, মামলা সমন্বয়কারী ফাহমিদা আকতার, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিতালী জাহান, প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আবু হানিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
জেডএফ/এইচএ/