ঢাকা: রাজধানীর বাড্ডার বিভিন্ন বেকারিতে চলছে মেয়াদহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ভেজাল খাদ্যের রমরমা ব্যবসা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেমিক্যাল ব্যবহার করে তৈরি এসব ভেজাল খাদ্যপণ্য খেয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
কোনো ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রোববার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে মধ্য বাড্ডার পোস্ট অফিস গলির নিউ মদিনা বেকারি, উত্তর বাড্ডার তেতুলতলার ফার্স্ট মর্নিং বেকারিসহ আরো কয়েকটি বেকারি ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বেকারিগুলোতে ১০ থেকে ১২ জন করে শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে, যাদের মধ্যে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি। শ্রমিকদের পরনে নেই কারখানার পোশাক, নোংরা হাতেই ময়দা মাখছেন তারা। এভাবেই তৈরি হচ্ছে চার ধরনের কেক, আট ধরনের বিস্কুট, চার ধরনের ব্রেড, বাচ্চাদের নুডুলস, চানাচুর, মণ্ডা-মিঠাই ও নিমকিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেমিক্যাল মিশিয়ে এসব ভেজাল পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। এসব বেকারির পণ্য যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে। তৈরির পর নামি-দামি ব্র্যান্ডের মোড়ক ব্যবহার করে পাইকারি ও খুচরা দামেও বিক্রি করা হচ্ছে।
মদিনা বেকারির ম্যানেজার জাহাঙ্গীরের দাবি, ‘আমাদের খাবারের মান ভালো। আমরা অনেক দোকানে সাপ্লাই দেই এবং খুচরা বিক্রি করি। ক্রেতাদের কোনো অভিযোগ নেই’।
লাইসেন্স আছে কি-না জানতে চাইলে কোনো জবাব দিতে পারেননি জাহাঙ্গীর। তবে পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব করেন বলে জানান তিনি।
ফার্স্ট মর্নিং বেকারির ম্যানেজার মূসা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমনে ব্যবসা অনেকেই করে। এইডা দিয়া আপনি কি করবেন? এতো কিছু জানি না। মালিকের লগে কথা কন’।
মাসে কতো টাকা আয় হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশি না, ৫০ থেকে ৬০ হাজারের (টাকা) মতো’।
তেতুলতলা রাস্তার পাশে বেকারিগুলোর পণ্য ভ্যানে করে বিক্রি করছিলেন মালেক মিয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ফার্স্ট মনিং থেকে মালামাল কিনে ভ্যানে করে বিক্রি করি’।
বাড্ডার পোস্ট অফিস গলির বাসিন্দা রিপন হাওলাদার মদিনা বেকারি সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, এ বেকারি থেকে একবার তিনি কেক কিনেছিলেন। বাসায় নেওয়ার পর তা খেয়ে সবাই পেটের পীড়ায় ভোগেন। সুস্থ হতে সাতদিন লেগে যায়।
তেতুলতলার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এ বেকারি সম্পর্কে আমরা জানি। কখনো কিছু কিনি না’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ও মেয়াদোর্ত্তীণ খাবার নিয়মিত খেলে পেটের পীড়া, জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। আর কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবার দীর্ঘদিন খাওয়ার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে’।
ৠাবের সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসব কারখানার সাধারণত কোনো অনুমোদন থাকে না। এ ধরনের অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেই’।
বাড্ডা থানার ওসি আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেকারিগুলোর দেখভালের দায়িত্ব আমাদের না। বিএসটিআই যদি অভিযোগ দেয় বা অনুমতি দেয় তবে আমরা ব্যবস্থা নেই’।
‘বেকারিগুলো থেকে পুলিশ বড় অংকের চাঁদা নেয়, এমন অভিযোগ আছে’- এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘এ অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের কারখানার লাইসেন্স দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেবো’।
বিএসটিআই’র বাড্ডা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিল্ড অফিসার মো. শরিফ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, ফার্স্ট মর্নিং বেকারির কোনো লাইসেন্স নেই। অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো’। নিউ মদিনা বেকারির লাইসেন্স থাকলেও পণ্যের মান ও বেকারির পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
আরএটি/এএসআর