সিলেট: সিলেটে কলেজছাত্র মিসবাহ উদ্দিন খুনের ঘটনায় মামলা হয়নি। তবে কবির নামে নিহতের এক বন্ধুকে খুঁজছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন কবির কাজী ম্যানশনের ৪র্থ তলার একটি টেইলার্সে কাজ করতেন। ঘটনার পর থেকে কবিরের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার তেতলী ইউনিয়নের বলদী গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
খুন হওয়া মিসবাহ উদ্দিনের পূর্ব পরিচিত ছিলেন কবির। গত রমজান মাসে কবিরের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় মিসবাহের। বিরোধের নিষ্পত্তি করে দেন কাজী ম্যানশনের ব্যবসায়ীরা। ওই সালিশ বৈঠকে কবিরকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তখন থেকে মিসবাহের ওপর কবিরের আক্রোশ ছিল বলেও ধারণা পুলিশের!
কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারী কমিশনার নুরুল হুদা আশরাফী বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাত থেকে সন্দেহভাজন আসামিকে ধরতে একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশের দু’টি টিম।
এদিকে, রোববার (২৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিহতের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের একটি কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় জানিয়েছেন নিহতের মামা মাহফুজ মিয়া।
এর আগে বিকেলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়না তদন্ত শেষে নিহত মিসবাহের মরদেহ স্বজনেরা গ্রহণ করে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান। মিসবাহ উদ্দিনের মরদেহ দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের চণ্ডিপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ।
বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন মিসবাহ। তার তিন বোন রয়েছেন।
মিসবাহের মামা মাহফুজ মিয়া আরও বলেন, তার মা নাজমা বেগম ও তিন বোনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। তাদের আহাজারিতে কেঁদেছেন গ্রামের লোকজনও।
সিলেট কমার্স কলেজে পড়ার সুবাদে নিহত মিসবাহ নগরীর মজুমদারী কোনাপাড়া এলাকার ৫৪ নম্বর বাড়ি শ্রাবণী ভিলায় তার পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন।
২০১৪ সালে সিলেট কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মিসবাহ। এরপর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দু’ বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে সুযোগ পাননি। তাই জার্মান প্রবাসী তার বাবা রহমত উল্লাহ’র কাছে যাওয়ার চেষ্টায়ও ছিলেন।
পুলিশের কাছে দেওয়া নিহতের বন্ধু রমজানের বর্ণনা মতে, জিন্দাবাজারস্থ কাজী ম্যানশনে জিম সেন্টার থেকে জিম শেষ করে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করার পর নিচে দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষায় ছিলেন মিসবাহ। এ সময় দুর্বৃত্তরা অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়।
ততোক্ষণে রমজান নিচে নেমে দেখেন, মানুষের জটলা ও মিসবাহের রক্তে ভেসে যাচ্ছে সড়ক। রমজান তার বন্ধু সোহাগ রক্তাক্ত মিসবাহকে নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিসবাহের মামা মাহফুজ মিয়া বলেন, মিসবাহ খুব শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। তিনি তার জার্মান প্রবাসী বাবার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ঘাতকরা তার পরিবারের সব স্বপ্ন তছনছ করে দিলো।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) নুরুল আফসার বলেন, খুনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশ মূল খুনিদের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আসামি যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। তবে তদন্তের স্বার্থে এগুলো বলা যাচ্ছে না।
শনিবার রাত ৮টায় নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারে কাস্টমস্ অফিসের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে ঘাড়ে কোপ দিয়ে খুন করা হয় মিসবাহকে। জনসম্মুখে নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটলেও ঘাতকদের আটকাতে কেউ এগিয়ে যাননি। মিসবাহের ঘাড়ে কোপ দেওয়ার পর অধিক রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২২১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৬
এনইউ/এএসআর