নাটোর: নাটোরের বাফার গুদামের ধারণ ক্ষমতা ৮ হাজার মেট্রিক টন সারের। কিন্তু বর্তমানে ৩৫ হাজার ৪২৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মজুদ রয়েছে।
ফলে অতিরিক্ত সার গুদামে ঠাঁই রাখতে না পেরে তা খোলা আকাশের নিচে গাঁদা করে রাখা হচ্ছে। ফলে দিনের পর দিন এভাবে বাইরে ফেলে রাখায় রোদ ও বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে সারের গুণগত মান।
গোডাউন কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষকদের কাছে বর্তমানে ইউরিয়া সারের চাহিদা না থাকায় ডিলাররা সার কম উত্তোলন করছেন। ফলে দীর্ঘদিন এভাবে ফেলে রাখায় অনেক সার জমাট বেঁধে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতোমধ্যে অনেক সার জমাট বেঁধে গেছে। জমাটবাঁধা এসব সার লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নরম করে ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে জমিতে এ সার দিয়েও কোনো উপকার পাচ্ছেন না কৃষকরা। উল্টো তাদের অর্থ ও শ্রম বিনষ্ট হচ্ছে।
বাফার গোডাউন সূত্র জানায়, বর্তমানে গুদাম ও বাইরে রাখা ৩৫ হাজার ৪২৫ দশমিক ৬৫ মেট্রিক টন সারের মধ্যে কৃষি বিভাগের ৫ হাজার ৯৭৪ মেট্রিক টন ও গোডাউনের ৮ হাজার মেট্রিক টন। এর বাইরে উদ্বৃত্ত্ব রয়েছে আরো ২১ হাজার ৪৫১ মেট্রিক টন সার। এই সারের অর্ধেকই চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চীন থেকে আনা ইউরিয়া সার দেশীয় সারের মত কাজ করে না। ২/৩ দিন মজুদ রাখলে তা জমাট বেঁধে যায়। এসব সার জমিতে দেওয়া হলে দেশি সারের মত উপকারে পাওয়া যায় না। কিন্তু ডিলাররা দেশি ইউরিয়া সারের সঙ্গে এসব সার নিতে তাদের বাধ্য করেন।
হলুদঘর গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, গত মৌসুমে দেশীয় ইউরিয়া সারের সঙ্গে চীনা ইউরিয়া সার তাকে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর সার জমাট বেঁধে যায়। দলা হয়ে যাওয়া এসব সার তেমন কাজে আসেনি।
এ বিষয়ে বাফার গোডাউনের ডিপো ইনচার্জ আব্দুল গাফফার জানান, জেলার ৬৫ জন বিসিআইসি ও ৬১ জন বিএডিসি ডিলারের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে এসব সার বিক্রি করা হয়। কিন্তু গত কয়েক মৌসুমে ইউরিয়া সারের চেয়ে ডিএমপি সারের দিকে কৃষকরা বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। এতে বাফার গুদামে সার মজুদ থাকছে। তবে বোরো ও রবি মৌসুমে চাহিদা বেশি হলে গুদামে সার মজুদ থাকে না।
তিনি আরো জানান, তারা দক্ষতার সঙ্গে বাইরে থাকা সারের সঠিক মান রক্ষা করছেন। বৃষ্টিপাতে সার যাতে নষ্ট বা গলে না যায় সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো সার নষ্ট হয়নি। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় চীনা সার জমাট বাঁধলেও গুণাগুণ নষ্ট হয় না বলেও দাবি তার।
জানতে চাইলে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক ও প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, জমাট বাঁধা চীনা সারে কৃষকরা প্রতারিত হয়েছেন এমন অভিযোগ জানা নেই। গুদামে সারের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও সরবরাহ ও বিতরণ যথানিয়মে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এনটি/এসআর