ঢাকা: সোমবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৮টা ৪৩ মিনিট। মহাখালী ফ্লাইওভারের মুখ পরিষ্কার, নেই কোনো জট।
এভাবেই যানজট না থাকলেও বন্ধ হলো ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখ। নিচে লেগুনাগুলো যাত্রী নামাচ্ছে। বেপরোয়াভাবে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা।
ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখের এই হ-য-ব-র-ল অবস্থায় যানজট গিয়ে ঠেকেছে শাহীন কলেজের গেটের ওপাশ পর্যন্ত। অথচ ফ্লাইওভারের উপরটা তখনও পুরোপুরি ফাঁকা। কোন গাড়িই নেই। প্রবেশ মুখ বন্ধ থাকার কারণে সেখানে উঠতে পারছে না কোন যানবাহন। এই যখন পরিস্থিতি তখন সেখানে নেই কোনো ট্রাফিক পুলিশ সদস্যও, যিনি খুলবেন প্রবেশ মুখের জট।
মহাখালী ফ্লাইওভারের এই মুখের যানজটের দৃশ্য প্রতিদিনের, বলছেন উত্তরা যাওয়ার জন্য ফ্লাইওভারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল নামের এক যাত্রী।
আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে সেখানে দেখা গেল পাবলিক পরিবহনগুলোর বেপরোয়া যাত্রী ওঠানামার দৃশ্য। সামনে আসা প্রতিটি গাড়ি অন্তত ২/৩ মিনিট থামিয়ে যাত্রীদের উঠানামা করাচ্ছে।
উত্তরাগামী বেঙ্গল পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারীর কাছে বাংলানিউজের প্রশ্ন- ‘কেন এভাবে এখানে গাড়ি রাখেন?’ ইব্রাহীম নামের ওই স্টাফ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বললেন, ‘রাখবো কোথায়? নিচ দিয়ে গেলে রেকার, মামলা। যাত্রী তো নামাতে হবে। এজন্য রাস্তার মাঝামাঝি স্থানে রেখেছি। ’
ভূইয়া পরিবহন, ঢাকা পরিবহন, ভিআইপি ২৭, এয়ারপোর্ট-বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহনের মতো পাবলিক বাসগুলোর যাত্রী ওঠানামা ছাড়াও এই প্রবেশমুখে ‘খ্যাপের’ জন্য যাত্রী তুলতে দেখা যায় প্রাইভেটকারগুলোকেও। এজন্য প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়েন এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও সাধারণ মানুষ।
এখানে গাড়ি থামার কারণে পিছনে জট লেগে গেছে, কোন উপায় আছে কিনা-জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর-আব্দুল্লাপুরগামী ভুইয়া পরিবহনের একজন স্টাফ জানালেন, জায়গা রাখছি তো। সবাই থামায়, যাত্রী নামায়। কিছুই করার নেই।
প্রবেশমুখ বন্ধ করে গাড়ি রাখায় পিছনে থাকা প্রাইভেটকার ও অফিসগামী মানুষদের মুখে বিরক্তির ছাপ দেখা যায় স্পষ্ট।
রাস্তার একপাশে প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের অফিস, অন্যপাশে এয়ারফোর্স অফিসার্স কোয়ার্টার নিঝুম। অথচ এই স্থানে নির্দ্বিধায় জটলা করে পরিবহনগুলোর যাত্রী ওঠানামা করানোর সঙ্গে সঙ্গে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে থাকলেও এ ব্যাপারে উদাসীন কর্তৃপক্ষ।
ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্টপেজ করে দিলে এখানে যানজট থাকবে না বলে মন্তব্য করেন সেখানে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আনিসুল। আর সব থেকে বড় প্রয়োজন ট্রাফিক পুলিশ নিযুক্ত করা, যোগ করলেন তিনি।
ফ্লাইওভারের মুখ থেকে একটু এগিয়ে ফ্লাইওভারের নিচে রাওয়া কনভেনশন হলের মুখে দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য।
প্রবেশ মুখের জটলা এবং যানজট থাকলেও কোনো ট্রাফিক পুলিশ না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্তব্যরত একজন কনস্টেবল বাংলানিউজকে জানালেন, ‘লোক নাই, থাকলে তো দিবে। গাড়ি বাড়ছে, ট্রাফিকের লোক বাড়ছে না। লোক বাড়াতে হবে। ’
ঢাকা শহরে প্রতিদিন তিনশ’ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে জানিয়ে এই পুলিশ সদস্য বলছেন, সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে ডিউটি শুরু করছি। নাস্তা করারও সময় পাইনি। দেখেন না কেমন এলোমেলো করে গাড়ি চালাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এমআইএইচ/আরআই