পার্বতীপুর(দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে প্রতিবন্ধি, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার ৯ লাখ ৬১ হাজার টাকার মধ্যে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি জানতে পেরে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরফদার মাহমুদুর রহমানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার বেলাইচণ্ডি ইউনিয়নে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মাসিক ভাতাভোগীর আওতায় নতুন ১৮১ জন দুস্থ প্রতিবন্ধি, বয়স্ক ও বিধবা তালিকাভুক্ত হন। এরমধ্যে প্রতিবন্ধি ৭৭ জন, বয়স্ক ৮০ জন ও বিধবা ২৪ জন রয়েছেন।
চলতি বছরের ২১ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, বেলাইচণ্ডি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ রাজার কৈপুলকী গ্রামের বাড়িতে ভাতাভোগীদের মাঝে জুলাই/২০১৫ থেকে জুন/২০১৬ পর্যন্ত ১২ মাসের টাকা বিতরণ করেন সোনালী ব্যাংক হুগলীপাড়া (পার্বতীপুর) শাখার কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধিদের মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা হিসাবে প্রত্যেকের এক বছরে ৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।
বয়স্ক ও বিধবারা মাসিক ৪০০ টাকা হিসাবে যেখানে একবছরে ৪ হাজার ৮০০ টাকা করে পাবেন, সেখানে তাদের দেওয়া হয় ১ হাজার ২০০ টাকা। ১৮১ জন ভাতাভোগী যেখানে পাবেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ২০০ টাকা, সেখানে তাদের দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৩০০ টাকা।
এদিকে, বয়স্ক ও বিধবাদের ভাতার বইয়ে টাকার অংক ৪,৮০০ ও প্রতিবন্ধিদের বইয়ে ৬, ০০০ টাকা দেখানো হয়েছে। বইয়ে টাকার অংক ঠিক লেখা হলেও তাদেরকে টাকা কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ভাতাভোগীদের।
এ বিষয়ে বেলাইচণ্ডি ইউনিয়নের অভিযুক্ত সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ রাজার বাংলানিউজকে বলেন, ‘এত টাকা কর্তন করা হয়নি। লোকজনের খরচ মেইনটেইন করার জন্য কার্ড প্রতি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা করে কর্তন করা হয়েছে। ’
টাকা বিতরণের সময় সেখানে ইউএনও তরফদার মাহমুদুর রহমান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। ইউএনও’র নির্দেশে ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভাতাভোগীদের টাকা দিতে সেখানে যান বলেও জানা গেছে।
বেলাইচণ্ডি বান্নিঘাট গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি গীতা রানী রায় (বই নম্বর-১০২৯), অতুল চন্দ্রের (বই নম্বর-১০২৫) পুত্রবধূ অঞ্জনা রানী বাংলানিউজকে জানান, তাদেরকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। অথচ বইয়ে ৬ হাজার টাকাই লিখে দেওয়া হয়েছে।
বয়স্ক ভাতাভোগী ব্রহ্মত্তর সোনাপুকুর গ্রামের শমসের আলী (বই নম্বর-৬৭৩৩), বিধবা ভাতাভোগী ফেরদৌসী বেওয়া (বই নম্বর-২৬৬১), কৈপুলকী দোলাপাড়ার ফাতেমা বেওয়া (বই নম্বর- ২৬৭৬), উচাপাড়ার বাসিরন (বই নম্বর- ২৬৭৭) বাংলানিউজকে জানান, তাদেরকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বইতে ৮ হাজার ৮০০ টাকা লেখা হয়েছে। এ বিষয়টি জানতে চাইলে তাদের বলা হয়, আপাতত এটা নাও, পরে আবার দেওয়া হবে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড হুগলীপাড়া শাখার ম্যানেজার রেজওয়ানুল হক বাংলানিউজকে জানান- ইউএনও’র নির্দেশে নুর মোহাম্মদ রাজার বাড়িতে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, ভাতাভোগীদের প্রাপ্য সব টাকা প্রত্যেকের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে টাকা প্রদানকারী ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান দাবি করেন।
পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরফদার মাহমুদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সমাজসেবা ও ব্যাংকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তিনি টাকা বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করে সেখান থেকে চলে আসেন। টাকা কম দেওয়ার বিষয়টি তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী’র কাছ থেকে জানতে পারেন। টাকা ফেরত সহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মন্ত্রী তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি তদন্তের জন্য ৩ ডিসেম্বর সব ভুক্তভোগী, সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও টাকা প্রদানকারী ব্যাংক কর্মকর্তাদের উপজেলা পরিষদে ডাকা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাংক ম্যানেজারকে তিনি সেখানে গিয়ে টাকা দিতে বলেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
পিসি/