ঢাকা: সুবল দাশ, বয়স চল্লিশের উপরে। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন।
সিটিস্ক্যান করার ফি জমা দেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক জানালেন, আগে যতো পরীক্ষা করানো হয়েছে সেগুলোর রিপোর্ট দেখতে হবে, তারপর সিটিস্ক্যান করা হবে। এদিকে প্রেসক্রিপশনে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক বলে দিয়েছেন পুরনো রিপোর্ট ছাড়া সিটিস্ক্যান করানো যাবে।
শুধু সুবল দাশ নয়, সোমবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টায় সুবলের মতো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিএসএমএমইউ এর চিকিৎসকদের পরামর্শ বা সুপারিশে রাজধানীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করতে এসে রোগীদের নানা ভোগান্তিতে পড়ার চিত্র দেখা যায়। এতে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করছেন রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনরাও।
এমনকি ডাক্তার দেখাতে এসে, একগাদা টেস্ট ধরিয়ে দিচ্ছেন এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
পপুলার ঘুরে দেখা যায়, সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি, এক্সরে, রক্ত পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে রোগীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে সিটিস্ক্যান, ইসিজি, এক্সরে করতে রোগীর আগের যাবতীয় চিকিৎসার রিপোর্ট দেখতে চাচ্ছেন। দেখাতে না পারলে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এমনকি কেউ এ হয়রানি থেকে বাঁচতে নতুন করে পপুলারে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সেরে নিচ্ছেন।
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দুটো লিফট রয়েছে। এর মধ্যে একটি লিফট জরুরি রোগীদের বহন করার জন্য। আরেকটি স্টাফ, ডাক্তার ও রোগীদের জন্য। এজন্য দীর্ঘ সময় ধরে রোগীদেরকে লিফটের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
রোগী সবুলকে নিয়ে আসা রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, সুবল দাদার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাকে নিয়ে এভাবে টানা-হেঁচড়া করা যন্ত্রণাদায়ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার যেখানে রোগী দেখে প্রায়োজনীয় টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে- এমন হয়রানির কোনো মানেই হয় না’।
বংলানিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে রুহুল আমিনের যখন কথা হয়, তখন সময় বেলা ১১টা। এরপর সকল রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়ও সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করাতে পারেননি সুবল দাশ।
একই সমস্যায় পড়েছেন ফরিদপুর থেকে বাবার চিকিৎসা করাতে আসা জসিম। বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক দেখিয়ে মেশিন নষ্টের কারণে এমআরআই করাতে এসেছেন পপুলারে।
বাবাকে হুইল চেয়ার বসিয়ে নেওয়ার সময় জসিম বলেন, বিএসএমএমইউ’তে ডাক্তার দেখানো ভোগান্তি, এখানে দেখি আরো ভোগান্তি। এক ডাক্তারের পরামর্শ আরেক ডাক্তার মানে না। সবচেয়ে বড় কথা কাস্টমার কেয়ার বা ক্যাশে টাকা নেওয়ার সময় আমাদের বলে দিলে পারতেন, আগের চিকিৎসার সকল রিপোর্ট আনতে হবে। আগে টাকা রেখে দিয়ে বলেন- এটা আনেন সেটা আনেন। এতো ভোগান্তি জানলে, অন্য ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতাম।
আমার মনে হয়, ‘বিএসএমএমইউ’র ডাক্তার কমিশন খেয়ে পপুলারে রোগীকে টেস্টের জন্য পাঠায়’।
এ সময় পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টারের ২য় তলায় দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. দেবযানি রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে এ নিয়ে ব্যাপক চিৎকার করেন।
টেস্ট করানোর সময় রোগীর আগের সকল চিকিৎসার রিপোর্ট জরুরি কিনা - জানতে চাইলে ডা. দেবযানি বলেন, রোগীর আগের রের্কড জেনে পরীক্ষা করালে রোগীর জন্য ভালো হয়। ব্যস্ততার কারণে এর বেশি বলতে চাননি তিনি।
পপুলার সূত্রে জানা যায়, সিটিস্ক্যান, এমআরআই ও ইসিজি করতে এখানে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা লাগে। রক্ত পরীক্ষা করাতে লাগে ১ থেকে ২ হাজার টাকা। কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হলো ১ হাজার টাকা ফি দিতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমসি/বিএস