ঢাকা: বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত আইনের সব ফাঁকফোকর বন্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বাল্য বিয়ে রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করলেও এটি যথেষ্ট নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে কানাডিয়ান দূতাবাস আয়োজিত বাল্যবিবাহ এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা রোধে নেতৃত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি অ্যাডওয়ার্ড বেইবিডার, ব্র্যাক ও ‘বালিকা মাত্রই বধু নয় বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সে’র ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর আন্না মিঞ্জ ও ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনওয়া পিয়েরে লাঘামে।
ড. গওহর রিজভী বলেন, বাল্যবিয়ের মাধ্যমে একজন শিশুকে অনিশ্চিত , হিংস্র ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। তার মানসিক বিকাশ, এগিয়ে যাওয়ার পথ সবকিছু রুদ্ধ হয়ে যায়। বাল্য বিয়ে একজন শিশুর কাছ থেকে তার শৈশব কেড়ে নেয়।
তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ অত্যন্ত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। এরজন্য পুরো সমাজ দায়ী। এ ব্যাধির বিরুদ্ধে সবাইকে এক সঙ্গে লড়াই করতে হবে।
বাল্য বিয়ের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করে ড. রিজভী বলেন, বাবা-মা সন্তানকে নিরাপত্তা দিতে না পেরে অনেক সময় জোর করে বিয়ে দিতে বাধ্য হন।
এক্ষেত্রে সম্প্রতি ঝিনাইদহে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় দুই একজন বাবার পা হারানোর ঘটনাটি উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে সম্প্রতি বিশেষ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে বা বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রপাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রেখে বিবাহ নিরোধ আইন-২০১৬ এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে অপ্রপাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ সুযোগ যাতে অহরহ ব্যবহার না হয়, সেজন্য আইনের নীতিমালাতে সব ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে।
সূচনা বক্তব্যে হাইকমিশনার পিয়েরে লাঘামে বলেন, বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে সহিংসতার ঝুঁকি বাড়ে। ১৮ বছরের কম বয়সী বিবাহিত নারীদের ক্ষমতায়ন ও সচেতনতার সুযোগ কম থাকায় তুলনামূলকভাবে তারা বেশি সহিংসতার শিকার হয়। প্রতিদিন বিভিন্নভাবে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে। বাল্য বিয়ের শিকার নারীরা এক্ষেত্রে অসহায়।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বাল্য বিয়ের হার শতকরা ৭৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে বাল্যবিবাহ এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আরও দূরদৃষ্টি প্রয়োজন।
ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি অ্যাডওয়ার্ড বেইবিডার বলেন, সব রকম সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে ছেলে-মেয়েকে রক্ষা করা উচিত। মেয়েদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে অবশ্যই শিশু বিয়ে বন্ধ করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে কোনো মেয়ের বিয়ে দেওয়া মানে তাকে শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, জীবিকাসহ অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা।
আন্না মিঞ্জ বলেন, সবার জন্যে একটি অধিক নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও উন্নত ভবিষ্যতের জন্য মেয়েদের আঠারো বছরের আগে বিয়ে হওয়া বন্ধ করতে হবে। আর এটা সমাজে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত মানসিকতা, মনোভাব ও সংস্কৃতি পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।
এ ছাড়া বালিকা ও তরুণীদের জীবন পরিবর্তনে নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নে অধিকতর বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধে নেতৃত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটকে (জিআইইউ-পিএম) পুরস্কৃত করা হয়।
এ ছাড়া ব্যক্তি হিসেবে এ পুরস্কার লাভ করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, লালমনিরহাট জেলার হাবিবুর রহমান এবং মেহেরপুর জেলার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।
দ্বিতীয়বারের মত ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশন এ পুরস্কারের আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
জেপি/এমএ