ময়মনসিংহ: ‘আমরা মিছিল নিয়ে বের হবার চেষ্টা করছিলাম। পুলিশ প্রথমে আমাদের বাধা দেয়।
পুলিশের একজন আবুল কালাম স্যারকে লাথি মারে এবং লাঠিপেটা করে। মাটিতে পড়ে গিয়ে স্যার তখন বলছিলেন ‘আমাকে ধরো, আমার খারাপ লাগছে। ’
দ্রুত আমরা একজন শিক্ষার্থীকে ওষুধের স্লিপ দিয়ে বাইরে পাঠাই। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীকেও পুলিশ আটক করে। এরপর অসুস্থ কালাম স্যারকে হাসপাতালে নিতে অ্যাম্বুলেন্স এলেও পুলিশ রাস্তা থেকেই অ্যাম্বুলেন্স বিদায় করে দেয়।
আমরা অনেক কষ্ট করে কলেজের পেছনের গেট দিয়ে কখনো রিকশা আবার কখনো ভ্যানে করে স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ’
কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আক্তার ও হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুণাভা আইচ মজুমদার।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাতে প্রেসক্লাব ময়মনসিংহ কার্যালয়ে এসে বাংলানিউজের কাছে এমন অভিযোগ করেন এ দুই শিক্ষক।
ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজ সরকারিকরণের দাবিতে রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে আন্দোলনকারীদের পুলিশের লাঠিপেটা ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালামের মৃত্যুর ঘটনায় তারা পুলিশের বাড়াবাড়িকেই দায়ী করছেন।
শিক্ষকদের একজন মাশরুফা সুলতানা মিমি বাংলানিউজকে বলেন, ‘উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিক বারবার ছবি তুলছিলেন আমাদের। তখন আমরা প্রতিবাদ করি। মহিলাদের ছবি আপনারা তুলতে পারেন না। তখন তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি মামলায় আপনাদের ঢুকাবো। ’
আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে এসব শিক্ষক বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে আবুল কালাম স্যার এখানে শিক্ষকতা করছেন। তিনি সহজ-সরল এবং বিনয়ী ছিলেন। তার ৩০ বছরের স্মৃতিবিজড়িত কলেজে তার মরদেহ জানাজার জন্য আনতে দেয়নি প্রশাসনের লোকজন।
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা জানান, ১৯৭২ সালে ফুলবাড়িয়া উপজেলা সদরে ফুলবাড়িয়া কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এরপর প্রায় ৮ বছর পর কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়।
১৯৮৬ সালে কলেজটি ডিগ্রী কলেজ উন্নীত হয়। ২০১১ সালে চালু হয় স্নাতক (সম্মান) কোর্স। এ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।
এতো কিছুর পরেও এ কলেজটি সরকারিকরণ হয়নি। সরকারিকরণ হয় মাত্র ৩’শ শিক্ষার্থীর বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা কলেজ। এ ঘটনার সূত্র ধরেই লাগাতার আন্দোলন শুরু করে কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
প্রায় ৪৩ দিন হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, অনশনসহ যাবতীয় কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চললেও বিপত্তি ঘটে গত বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর)।
সেদিন আন্দোলনকারী এলাকাবাসী এমপি পুত্রের মালিকানাধীন আখালিয়া হেলথ সেন্টার, আলম এশিয়া কাউন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলায় ১৮০ জনকে আসামি করা হয়। গ্রেফতার হয় ৩ আন্দোলনকারী।
এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয় এবং তাদের লাঠিপেটা করে। এতে আহত শিক্ষক আবুল কালাম ও স্থানীয় পথচারী সফর আলী (৬০) মারা যান।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠলেও পুলিশ বলছে, ‘নাটক সাজিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতেই পুলিশকে অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে।
ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব বাংলানিউজকে বলেন, কলেজের ভেতর থেকে আন্দোলনকারীরা যখন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করছিল তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।
তিনি বলেন, যে শিক্ষক মারা গেছে তিনি পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হননি। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পুলিশ বাধা দেয়নি। আন্দোলনকারীরাই গাছের গুড়ি ও খাম্বা ফেলে অবরোধ ডাকার কারণেই সেদিন তারা ওই পথে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে পারেননি।
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হবার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেছেন, বুকে ব্যথা নিয়ে ওই শিক্ষক ভর্তি হয়েছিলেন। ওই চিকিৎসকের বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে।
ওসি রাজিব আরো অভিযোগ করে বলেন, আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী মাইকে সেদিন পুলিশের পরিবারের ওপর হামলা করারও হুমকি দেন। এরপরেও পুলিশ নিশ্চুপ ছিল। কিন্তু পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পর পুলিশ লাঠিপেটা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএএএম/আরআই