দিনাজপুর: আগে খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটাতাম। কিন্তু এখন রাতে কুয়াশা পড়ে কাপড় ভিজে যায় তাই গাছের নিচে ঘুমাই।
কথাগুলো বলছিলেন আব্দুর রহমান নামে এক রিকশাচালক। বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়।
৩ বছর আগে কাজের সন্ধানে দিনাজপুরে আসেন তিনি। সেই থেকে শহরে ভাড়ায় চালিত রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশা চালিয়ে যা আয় করেন তা থেকে মহাজনের টাকা পরিশোধ করে বাকী টাকা পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেন।
গ্রামের বাড়িতে তার একটি ঘর রয়েছে। সেখানে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে থাকে। দু-তিন মাস পর পর বাড়ি যান তিনি। সারাদিনের আয় থেকে শহরের কোন বস্তিতে একটি ঘর ভাড়া করে থাকার সামর্থ্যও নেই তার। তাই তিনি স্টেশনের খোলা আকাশ বা গাছের নিচে রাত যাপন করেন।
রহমানের মতো সবুজ, জুয়েল, নাসিমা আক্তার, জরিনা খাতুনসহ অনেকেই এভাবে খোলা আকাশে নিচে বা গাছের নিচে রাত যাপন করেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই দিনমজুর ও ভিক্ষুক।
জুয়েল বলেন, আগে স্টেশনের প্লাটফর্মে ঘুমাতাম। কিন্তু নতুন করে সংস্কারের পর স্টেশনের ভেতরে আর ঘুমাতে দেয়না। তাই স্টেশন চত্বরেই খোলা আকাশের নিচে ঘুমাতে হয়। খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোর সময় বৃষ্টি শুরু হলে স্টেশনের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সারারাত।
এছাড়া শীতের রাতে যখন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়ে তখনও ঘুমাতে অনেক কষ্ট হয়। তখন শীতের তীব্রতা কমাতে আশপাশ থেকে আবর্জনা কুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে তার পাশে ঘুমাই।
অসহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো এভাবেই বিছানা পাতেন ফুটপাত ও গাছের তলায়। গরমের সময় তারা যেমন তেমন ঘুমাতে পারেন। তবে অসুবিধা হয় শীতের রাতে। তখন তারা স্টেশনের প্লাটফর্মে এবং গাছের গোড়ায় ইট সিমেন্টের তৈরি পাকা শানের উপরে খবরের কাগজ বিছিয়ে রাতযাপন করেন।
শীত বা গ্রীস্ম নয় দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে অবস্থিত ডাউয়া ও আম গাছ তলার প্রতিদিনের চিত্র এটি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
আরএ