ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরিশালে শাপলার বিলে বোরো আবাদের অপেক্ষা

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
বরিশালে শাপলার বিলে বোরো আবাদের অপেক্ষা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শীত পুরোপুরি না এলেও শীতের সৌন্দর্য জানান দিতে শুরু করেছে বরিশালের অনিন্দসুন্দর শাপলার বিল। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই সন্ধ্যা নামতে না নামতেই শাপলার বিলের বুকজুড়ে হাজারে হাজার লাল শাপলার গায়ে জমছে শিশির।

বরিশাল: শীত পুরোপুরি না এলেও শীতের সৌন্দর্য জানান দিতে শুরু করেছে বরিশালের অনিন্দসুন্দর শাপলার বিল। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই সন্ধ্যা নামতে না নামতেই শাপলার বিলের বুকজুড়ে হাজারে হাজার লাল শাপলার গায়ে জমছে শিশির।

ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই সে শিশির কনা মুক্তার দানা হয়ে ধরা দিচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের চোখে। শত শত একর জমির পুরো বিলজুড়ে কেবল লাল শাপলার সমারোহ দেখে যে ক‍ারো মনে হতেই পারে মানসপটে আঁকা কোনো ক্যানভাসের কথা।

তার ওপর এখানে-সেখানে প্রায় সারাদিনই খাবারের সন্ধানে মত্ত বা বিশ্রামরত বক, সরালি পাখি এই বিলকে করে তুলেছে আরো সুন্দর। ফলে প্রতিদিনই শীতের সকাল, দুপুর বা পড়ন্ত বিকেলে শাপলার বিলের সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত আসছেন দর্শনার্থীরা।

এদিকে, বিলে পানি কমে যাওয়ায়, কোথাও কোথাও শুকিয়ে যাওয়ায় শাপলা ও আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত হয়ে উঠতে শুরু করেছেন এখানকার কৃষকরা।

তাদের লক্ষ্য বোরো আবাদ। এক ফসলি এ বিলের জমিতে আবাদ করা বোরা ধানই তাদের জীবিকার অন্যতম উৎস। ফলে অগ্রহায়ণের ‍মাঝামাঝি এসে শুরু হয়েছে চাষিদের প্রস্তুতি। ডিসেম্বরের শুরু নাগাদ শাপলার বিলের বুক জুড়ে শোভা পাবে বোরো ধান।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসজুড়ে শাপলার বিলে থাকে পর্যাপ্ত পানি ও শাপলা ফুল। নভেম্বরে তা অনেকটা শুকিয়ে যায়। সে সময়টাতে শাপলা তুলে ফেলে নিচু এ জমিতে বোরোর আবাদ করেন চাষিরা।

বরিশাল সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম ও পাশের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা ও খাজুরিয়া গ্রামের কয়েকশ হেক্টর জমি নিয়ে এ বিলের মূল অবস্থান।


উজিরপুর ও আগৈলঝাড়ার সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট বিলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয় শাপলা। শুরুতে এ নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহ না থাকলেও; সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাপলা বিক্রি করেও ভালো অর্থ আয় করেন স্থানীয়রা।

আবার শাপলার বিলে মাছ শিকার করেও জীবিকা নির্বাহ করেন অনেকে। এ বিলে ছোট-বড় কৈ, খলিসা, টাকি, শোল, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়।

সেইসঙ্গে শাপলার বিলে দেখতে আসা পর্যটকদের সংখ্যা দিন-দিন বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকা এ বিল এলাকার গুরুত্ব।

সম্প্রতি সরেজমিনে শাপলার বিল ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, এ বিলের জমিতে শীতের এ সময়টাতে বোরা আবাদ করা হয়। তবে অনেক জায়গায় কৃষক এখনো পানি কমার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বেশিরভাগ অংশে পানি কমে যাওয়ায় শাপলা ও আগাছা পরিষ্কার করে তৈরি করা হচ্ছে খেত।

বিলের আগৈলঝাড়ার বাগদা গ্রামের সাগর জানান, পুরো বিল এলাকাজুড়ে বোরো ধানের চাষ হয়। তবে এ জমিতে সারের ব্যবহার  অনেক কম। ধান তুলতে তুলতে বর্ষার পানি উঠতে শুরু করে। ফলে এ ফসলের জন্য তারা সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন।

বিলের উজিরপুর অংশের শাতলা গ্রামের মিজান মিয়া জানান,  ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সময়ে তারা বিলের জমি তৈরির জন্য শাপলা গাছের গোড়া কেটে দেন। এতে বীজের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এসব গাছ পানির সঙ্গে মিলে ও পচে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। ফলে এক ফসলি হলেও তারা বোরোর ভালো ফলন পান।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এমএস/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।