শেরপুর (বগুড়া) থেকে ফিরে: অনেক পুরনো খাল ভদ্রাবতী। বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কুসুম্বী ও বিশালপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান।
প্রকল্পের শর্তানুযায়ী স্লুইসগেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু কাজ বেশি দূর এগোয়নি। শুধু রডের খাঁচা তৈরি করে মেরে দেওয়া হয়েছে বরাদ্দের বাকি টাকা। প্রায় ১৪ কিলোমিটার খালের একাধিক স্থানে এরকম স্লুইসগেট নির্মাণের কথা প্রকল্পে বলা হলেও তা আলোর মুখে দেখেনি।
এভাবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের অধীনে চলা এই খাল খননে বরাদ্দকৃত সিংহভাগ টাকাই লোপাট করা হয়। উপজেলা প্রকৌশলীর সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সমিতির নেতারা এসব টাকায় পকেট ভরেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী এ কে এম ওবাইদুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভদ্রাবতী খাল খননে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ পাইনি। প্রকল্পের সব কাজ ঠিকঠাক মতো চলছে বলেও দাবি করেন এই প্রকৌশলী।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার পানি সেচ প্রকল্পের অধীনে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ভদ্রাবতী খাল পুনঃখননে পৃথক দু’টি প্রকল্প নেওয়া হয়।
উপজেলার মুরাদপুরের চাকাতলা ব্রিজ থেকে রানীরহাট পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খনন কাজ। প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী মার্চ পর্যন্ত।
খালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইচ্ছেমতো করা হয়েছে খনন কাজ। এক্সক্যাবেটর মেশিনের সাহায্যে সামান্য করে মাটি খোঁড়া হয়েছে। মাটি খালের দু’পাশে উঠিয়ে রাখা হয়। পরে তা বিছিয়ে সমান করে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের শর্তের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। গেল বর্ষায় সেই মাটি ধুয়ে খালের ভেতর পড়েছে। মাটি পড়ে খাল যেন পুরনো অবয়ব ফিরে পেয়েছে।
নজরুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, মোজাহার হোসেনসহ একাধিক স্থানীয় বাংলানিউজকে বলেন, নিয়ম মেনে খনন করা হলে খালের বুকজুড়ে সারাবছর পানি থাকতো। দুই ইউনিয়নের হাজারো কৃষক জমিতে সেচ দিতে পারতেন।
কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কৃষকের জন্য নেওয়া সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। খালে পানি না থাকায় আগের মতোই বিকল্পভাবে সেচ দিয়ে কৃষকদের জমি চাষ করতে হচ্ছে বলেও জানান তারা।
প্রকল্পের শর্তানুযায়ী খনন কাজ বাস্তবায়নে পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করার কথা। এতে উপকার পাবেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা। তারাই হবেন সমিতির সদস্য। খননের দায়িত্ব পালন করবেন সমিতির সদস্যরা। কিন্তু সমিতি গঠনেও অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
নবির উদ্দিন, জহুরুল ইসলামসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, সমিতিতে তাদের স্থান দেওয়া হয়নি। বাইরের লোকজনকে নিয়ে নাম সর্বস্ব দু’টি সমিতি গঠন করা হয়েছে। তারাই কিছু ভাড়াটে শ্রমিক ও খনন যন্ত্র দিয়ে ইচ্ছেমাফিক খালের মাটি কেটেছে।
কুসুম্বী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলম পান্না বাংলানিউজকে বলেন, কাগজে-কলমে খাল খনন হয়েছে। বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্টরা সবাই মিলে প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগি করে লুটপাট করেছে। তাই খালের করুণ দৃশ্য কারো চোখে ধরা পড়বে না বলেও এই চেয়ারম্যান মন্তব্য করেন।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দুই সমিতির সভাপতি যথাক্রমে জুলফিকার আলী সনজু ও জিয়াউল হক জিয়া বাংলানিউজকে বলেন, খাল খনন কাজে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি। প্রকল্পের শর্ত মেনেই খনন কাজ করা হয়েছে।
খাল খননের ফলে এলাকার কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন ভবিষ্যতেও হবেন বলে দাবি করেন সমিতির এই দুই সভাপতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এমবিএইচ/এমজেএফ