ঢাকা: গন্তব্য যখন নানা অলি গলি পেরিয়ে, তখন রিকশা-গাড়ি আবার রিকশায় ওঠা- এমন ঝামেলা সঙ্গে আছে। কিন্তু কোনো ঝামেলাই হলো না।
বিশ্বে প্রথমবারের মতো ঢাকা থেকেই স্যাম যাত্রা করেছে। মোটরসাইকেল বহুল শহরগুলোতে এ ধারণা খুব শিগগিরই পৌঁছে যাবে।
এবারের যাত্রা স্যামের মোটরসাইকেলে গুলশান ১ নম্বরে যেতে হবে। বসুন্ধরার ভেতর থেকে মোবাইলে স্যাম অ্যাপসে সার্চ দেওয়ার পরপরই ম্যাপে কাছাকাছি থাকা একটি বাইক দেখা গেলো। রিকোয়েস্ট মাত্রই তা গ্রহণ করে একজন বাইকারের ফোন। অবস্থান জেনে আরও কিছুক্ষণ পর বাইকার এসে হাজির।
বাইকার সাজ্জাদ হোসেন ছোটখাটো ব্যবসা করেন। এজন্য তাকে ঘুরতে হয় পুরো ঢাকা শহর। চলার পথে মোবাইল ডাটা অন রাখেন তিনি। তখন অ্যাপসে কোনো রিকোয়েস্ট এলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে যান। এতে বাড়তি আয়ও হয়। হাতে নগদ টাকা নেওয়ার ঝামেলা নেই। তাই টাকা চাওয়া বা নেওয়ার মতো বিব্রতকর অবস্থাও নেই ।
বুধবার সকালে স্যাম বাইকার সাজ্জাদের বাইক চেপে রাইড শুরু। নতুনবাজারের আগেই বাড্ডা রোডে বিশাল জ্যাম। আশেপাশের গাড়ি থেকে যাত্রীরা হা করে তাকিয়ে আছে আর মোটরসাইকেলের পেছনের সিট চেপে সাই করে চলে যাচ্ছি আমরা।
এমনভাবে অসংখ্য মোটরসাইকেল চলছে সড়কে। গাড়ি ছেড়ে এরকম মোটরসাইকেলের যাত্রী হয়ে যেতে পারেন আপনিও। দ্রুত ও সহজ আর গাড়ি বদলানোর ঝুটঝামেলা বাদ দিয়ে এমন একটি অ্যাপভিত্তিক সেবা নিতে পারেন যেকউ।
যেমন সেবা নিয়ে মাত্র ৩০ টাকায় গুলশান ১ নম্বরের ১৩৮ নম্বর সড়কে পৌঁছে গেছি।
ঢাকার মানুষের সচরাচর দ্রুত ও সহজ চলাচলে মোটরসাইকেলের এমন যোগাযোগ একটি পরিবর্তন সূচিত করতে পারে- এমনটা মনে করে স্যাম কর্তৃপক্ষ।
কারণ, তারা হিসেব করে দেখেছে সাড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ মোটরসাইকেল ঢাকা শহরে সকাল-বিকেল চলছে। অথচ এসব মোটরবাইকের পেছনের সিটটি খালি যাচ্ছে। এসব সিটে একজন করে যদি যায় তাহলে যানবাহন সংকটে আটকে থাকা অনেকের গন্তব্যে পৌঁছা সহজ হয়। ব্যয়বহুল কোনো প্রাইভেটকার বা টেক্সির মতো নগদ লেনদেন এতে নেই। মোবাইলে হিসেব করেই টাকা কেটে যাচ্ছে।
ঢাকার অনেক মোটরসাইকেল চালক এখন তাদের মোবাইল ফোনে এই ‘স্যাম বাইকার’ নামে অ্যাপস নামিয়ে কাউকে শেয়ারিং করে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার যারা মোটরসাইকেলের যাত্রী হয়ে যেতে চাচ্ছেন তারা ‘স্যাম রাইডার’ অ্যাপস নামিয়ে সঙ্গী হচ্ছেন মোটরসাইকেলের।
স্যাম বাইকে সবনিম্ন ১৮ টাকা ভাড়া আসবে। প্রতি কিলোমিটারে ৬ টাকা করে দিতে হবে। তিন কিলোমিটারের মধ্যে নেমে গেলেও সবনিম্ন তিন কিলোমিটারের ভাড়া দিতে হবে। ওয়েটিং চার্জ প্রতি মিনিট ২ টাকা। তবে প্রথম ৫ মিনিট অপেক্ষায় কোনো ভাড়া আসবে না।
অ্যাপসের মধ্যে ই-ওয়ালেটে যেকেউ বিকাশ ও মাস্টার ও ভিসা কার্ডসহ সব উপায়ে রিচার্জ করতে পারবে।
অ্যাপ ভিত্তিক এরকম সেবা নিয়ে বিআরটিএ আপত্তি তুললেও ‘স্যাম’ অ্যাপস নিয়ে নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বিআরটি। যানবাহন সংকটের এই সময়ে যাত্রীসেবায় এমন একটি অ্যাপভিত্তিক সুবিধাকে তারা ভালো চোখে দেখছেন। কারণ এটি টেক্সি বা প্রাইভেটকারের সেবা নয়। শুধু মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী মাত্র যাওয়া আসার পথে শেয়ারিং করছেন। বাণিজ্যিক পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না।
এ নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর স্যাম এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমতিয়াজ কাসেম জানিয়েছেন, ‘চেয়ারম্যান এটাকে ইতিবাচক ভাবে দেখেছেন। মৌখিকভাবে অ্যাপভিত্তিক সেবাটি তুলে ধরার পর বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেছেন, এটা চলতে পারে। তবে বিআরটিএ বিস্তারিত অবগত করতে লিখিত পত্র চেয়েছে। এরপর এটা পুরোদমে চালুর ক্ষেত্রে বাধা থাকবে না বলে মনে করেন ইমতিয়াজ কাসেম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
এসএ/জেডএস