ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হাতুড়ে কান চিকিৎসকের অদ্ভুত চিকিৎসা!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০১৬
হাতুড়ে কান চিকিৎসকের অদ্ভুত চিকিৎসা!

নির্ধারিত বেঞ্চে বসে আছেন কানের রোগী। পাশেই বসেছেন কান চিকিৎসক মো. আপেল। মাথায় গোলাকার সাদা বেল্ট লাগানো, সঙ্গে বাঁধা কাচের লেন্স। সূর্যের আলো এসে সরাসরি পড়ছে সেই লেন্সে। আলোক বিচ্ছুরণ প্রবেশ করছে কানের ভেতর।

বগুড়া: নির্ধারিত বেঞ্চে বসে আছেন কানের রোগী। পাশেই বসেছেন কান চিকিৎসক মো. আপেল।

মাথায় গোলাকার সাদা বেল্ট লাগানো, সঙ্গে বাঁধা কাচের লেন্স। সূর্যের আলো এসে সরাসরি পড়ছে সেই লেন্সে। আলোক বিচ্ছুরণ প্রবেশ করছে কানের ভেতর।

সেই আলোয় কানের ভেরতটা দেখছেন চিকিৎসক। এরপর ব্যাগের ভেতর থেকে বের করে আনেন নানা ধরনের যন্ত্রপাতি। কানের পাতা টেনে সেগুলো কানের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কানের সম্পর্শকাতর অংশে আনা নেওয়া করা হচ্ছে সাইকেলের স্প্রক ও ফরসেভ। সঙ্গে নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যাদি দিয়ে পরিস্কার করা হচ্ছিলো কানের ভেতরটা। এভাবে চলে হাতুড়ে কান চিকিৎসকের অদ্ভুত চিকিৎসা !

বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার খোকন পার্ক সংলগ্ন সড়কের পাশে বসে নিয়মিত কানের চিকিৎসা দিয়ে যান এসব হাতুড়ে চিকিৎসকরা।

অথচ সড়কের আরো একটু দক্ষিণে সার্কিট হাউজ। দক্ষিণ-পূর্বে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কার্যালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কার্যালয় এ জেলা শহরেই। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারো নজরেই যেন ধরা পড়ছে না হাতুড়ে এসব কান চিকিৎসকের অদ্ভুত চিকিৎসাসেবা ।

দিব্যি তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ।

আরেক কান চিকিৎসক মো. জাকির হোসেন। গাবতলী উপজেলার রাশেম্বপুর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনিও একই স্থানে বসে গ্যারান্টি সহকারে কানের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে তার চিকিৎসাসেবা।

জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কান পরিস্কার করতে তিনি ২০টাকা নেন, মেডিসিন ওয়াশ ৩৫টাকা এবং জটিল সমস্যা হলে ফি বাড়ে। চিকিৎসা সেবার কাজে লেন্স, ফরসেভ, সাইকেলের স্প্রক, অলিভওয়েল তেল, পেভিসন ক্রিম, জোনাজেন ক্রিম, সরিষার তেল, লাইট, সিরিঞ্জ, তুলা, সেভলন ইত্যাদি ব্যবহার করেন।

ঝুঁকি আছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩৫ বছর ধরে এ কাজ করছি। কানের অনেক জটিল সমস্যা সমাধান করেছি। আল্লাহর রহমতে কারো কোনো সমস্যা হয়নি। তার চিকিৎসায় অসংখ্য রোগী ভাল হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এই শহরে শতাধিক হাতুড়ে কান চিকিৎসক রয়েছেন। তারা কোথাও স্থায়ী হয়ে বসেন না। ভ্রাম্যমাণ হিসেবে একেক দিন শহরের একেক স্থানে অবস্থান নিয়ে এ কাজ করেন তারা।

শিক্ষক আব্দুল মান্নান, ব্যবসায়ী সজীব আহমেদ, ছাত্র রাকিব হাসান বাংলানিউজকে জানান, হাতুড়ে কান চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা সেবা নেওয়া মানুষগুলোর দোষও একেবারে কম না। কারণ অনেক ভদ্র, শিক্ষিত ও জানাশোনা মানুষ চিকিৎসা নিতে প্রতিনিয়ত এদের কাছে যান।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় এই ধরনের ভুল চিকিৎসার পরিমাণ বাড়ছে বলে অভিযোগ তাদের।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. অর্ধেন্দু দেব বাংলানিউজকে বলেন, এটা কোনো বিজ্ঞান সম্মত চিকিৎসা সেবা হাতে পারে না। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় এমন কাজে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এছাড়া এসব হাতুড়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের তেমন কিছু করার নেই।

তিনি আরো বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাই দ্রুত বিষয়টি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নজরে তুলে ধরবেন বলেও জানান এই সিভিল সার্জন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এমবিএইচ/আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।