ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দখল হয়ে যাচ্ছে বধ্যভূমি!

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
দখল হয়ে যাচ্ছে বধ্যভূমি!  ছবি- অনিক খান বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর পেছনে ব্রক্ষপুত্র নদের বালুচরের বধ্যভূমিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষকে তথাকথিত ফায়ারিং স্কোয়াডের নামে হত্যা করা হয়। এরপর ব্রক্ষপুত্র নদে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয়।

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর পেছনে ব্রক্ষপুত্র নদের বালুচরের বধ্যভূমিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষকে তথাকথিত ফায়ারিং স্কোয়াডের নামে হত্যা করা হয়। এরপর ব্রক্ষপুত্র নদে মরদেহ ভাসিয়ে দেয়া হয়।

ব্রক্ষপুত্র নদ তীরে ও চরে তখন পড়ে ছিল শত শত মানুষের কঙ্কাল।

পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতীক চিহ্নিত করে স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর এখানে গড়ে ওঠে বধ্যভূমি।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত এ বধ্যভূমির জায়গা দখল করতে সেখানে পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বধ্যভূমির চারপাশে জমেছে ময়লার আস্তর।

ফলে বধ্যভূমির পরিবেশ হয়ে উঠেছে বিপন্ন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে বধ্যভূমির এমন করুণ চেহারার দেখা মিললো।

ময়মনসিংহের মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল বলেন, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহে প্রবেশ করে। ওই সময় গঠিত হয় শান্তি কমিটি।

জেলা পরিষদের ডাক বাংলোর ঠিক পেছনেই শান্তি কমিটির সাইনবোর্ডও ঝুলানো হয়। এরপর এটি টর্চার সেল ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের জন্য বেছে নেয় তারা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, একাত্তরে রাজাকারদের এ টর্চার সেলে অসংখ্য মানুষকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এ কিলিং সেন্টারে চোখ বেঁধে অসংখ্য মানুষকে সেই সময় হত্যা করা হয়।

আর এসব গণহত্যার প্রধান হোতা ছিলেন মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান।

একাত্তরে নিরীহ বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞের এ স্মৃতি অম্লান করে রাখতে ২০০৮ সালের দিকে এখানে জেলা পরিষদের অর্থায়নে বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। কিন্ত‍ু এখানে নেই কোনো নামফলক।

পাড়ার শিশু-কিশোররা প্রতিনিয়তই জুতা পায়ে এ বধ্যভূমিতে ওঠে এর পবিত্রতা নষ্ট করছে, জানান স্থানীয় তরুণ ধ্রুব সাহা।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বধ্যভূমি নির্মাণের সময়েই কায়দা করে তার গাঁ ঘেষে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। বধ্যভূমির পাশেই এরজন্য সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ ঘরের ভাড়া তুলেন। এভাবেই প্রতিনিয়তই বধ্যভূমির জায়গা দখলকারীরা নিজেদের কব্জায় নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

একই রকম অভিযোগ করে ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরতে এ বধ্যভূমিকে দখলমুক্ত করতে হবে।

এখনো এ বধ্যভূমিতে দর্শনীয় কিছু করা হয়নি। দখলদারদের কবল থেকে আগে বধ্যভূমি উদ্ধার করতে হবে। এর পরিবেশও উপযোগী করতে হবে।

দখলের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) খলিলুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ভূমি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।