ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গ্যাস চুরির মহোৎসব, ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএসটিআই!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
গ্যাস চুরির মহোৎসব, ধরতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএসটিআই!  ছবি-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

রাজধানীর মধুবাগের সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক আজিজুল ইসলাম। ১০০ টাকার গ্যাস কিনলে এক হাজার টাকার ভাড়া মারতে পারেন তিনি। অথচ কিছু কিছু ফিলিং স্টেশন থেকে কেনা ১০০ টাকার গ্যাসে ৭০০ টাকার ভাড়া মারতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

ঢাকা: রাজধানীর মধুবাগের সিএনজি চালিত অটোরিকশার চালক আজিজুল ইসলাম। ১০০ টাকার গ্যাস কিনলে এক হাজার টাকার ভাড়া মারতে পারেন তিনি।

অথচ কিছু কিছু ফিলিং স্টেশন থেকে কেনা ১০০ টাকার গ্যাসে ৭০০ টাকার ভাড়া মারতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।
 
সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর গ্যাস কম দেওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনে (বিএসটিআই) করেও কোনো প্রতিকার পাননি আজিজুল। কারণ, এ প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্যাস চুরি ধরার যন্ত্র নেই।
 
আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ১০০ টাকার গ্যাস নিলে এক হাজার ট্যাকার ভাড়া মারোন যায় না। সিএনজি দেওয়া শুরুর আগেই মিটার উঠতে শুরু করে অনেক পাম্পে। আমরা কারোর কাছে কিছু কইতে পারি না’।
 
আরও অনেক ক্রেতাই বিএসটিআই ছাড়াও তিতাস ও গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কাছে গ্যাস চুরির অভিযোগ দেন। কিন্তু এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান কোনো সমাধান না করে ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেয়। কারণ, গ্যাস চুরি ধরার কোনো যন্ত্র তাদের কাছে নেই। ফলে ক্রেতারা ওজনে গ্যাস কম পেলেও কারো কাছে কিছু বলার থাকে না।
 
জনগণের এমন সমস্যা উপলব্ধি করে ‘ইস্টাবলিশমেন্ট অব ক্যালিব্রেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন ফ্যাসিলিটিজ অব সিএনজি ফ্লো মিটার ফর সিএনজি ফিলিং স্টেশন ইন বিএসটিআই’ প্রকল্প হাতে নেয় বিএসটিআই। এ প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য, গ্যাস চুরির প্রতিকার।
 
কিন্তু প্রকল্পের আওতায় সিএনজি মাস ফ্লো মিটার ক্যালিব্রেশন ও ভেরিফিকেশন ল্যাবরেটরি অবকাঠামো নির্মাণে বার বার ব্যর্থ হয়েছে বিএসটিআই। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিস ট্যাংক লরি ক্যালিব্রেশন সেন্টার নির্মাণও সম্ভব হয়নি। ফলে সারা দেশে বিদ্যমান সিএনজি স্টেশনের ডিসপেন্সিং ইউনিটের পরিমাপ যাচাই, মিটার টেম্পারিং রোধ ও সিএনজি গ্যাসের পরিমাপের সঠিকতার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বিএসটিআই।

বিএসটিআই সূত্র জানায়, গ্যাস চুরি ধরতে সাতটি সিএনজি মাস্টার মিটার কেনার কথা ছিল ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল মেয়াদে। এ পর্যন্ত চারবার টেন্ডার আহ্বান করা হলেও কেনা যায়নি। ফলে প্রকল্পের ১৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত গেছে। তবে পঞ্চমবারের মতো দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
 
এদিকে ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিএসটিআই অফিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না কিনতে পেরে ২০১৭ সালের পর্যন্ত জুন আবারও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে গ্যাস চুরি ধরার মেশিন কিনতে পারবে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছে বিএসটিআই।

সময়ের সঙ্গে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়ও। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল মাত্র ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু একই যন্ত্রপাতি সময়ের মধ্যে না কেনার ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
 
প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে। কিন্তু আমরা টাকা পরিশোধ করলেও ঠিকাদাররা যন্ত্রপাতি দিতে পারছেন না। ফলে চারবার টেন্ডার আহ্বান করেও মেশিন কেনা যায়নি। আশা করছি, পঞ্চম টেন্ডারে গ্যাস চুরি ধরার মিটারগুলো অন্তত কিনতে পারবো’।
 
বিএসটিআই সূত্র জানায়, দেশের পরিবহন সেক্টরে সিএনজি গ্যাসের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সারা দেশে প্রায় ৬০০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন স্থাপিত হয়েছে। ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও সিএনজি ডিসপেন্সারের ক্যালিব্রেশন ও ভেরিফিকেশনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো পদ্ধতি বাংলাদেশে এখনও ব্যবহার শুরু হয়নি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।