ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পারাবত থেকে ‘পর্বত’

আবু তালহা, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
পারাবত থেকে ‘পর্বত’ ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

‘ঝক ঝকাঝক ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ঐ, ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই’। তখনও কুয়াশা কাটেনি পুরোপুরি। বিমানবন্দর স্টেশন ধরে হুইসেল বাজিয়ে চলে গেলো বেশ ক’টি ট্রেন। কিন্তু একটিও সিলেট যাবে না!

পারাবত এক্সপ্রেস থেকে: ‘ঝক ঝকাঝক ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ঐ, ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই’। তখনও কুয়াশা কাটেনি পুরোপুরি।

বিমানবন্দর স্টেশন ধরে হুইসেল বাজিয়ে চলে গেলো বেশ ক’টি ট্রেন। কিন্তু একটিও সিলেট যাবে না! দাদার চাদরের ভেতর থেকে শুধু মুখটুকু বের করে বসে আছে ইশরাত জাহান হিয়া। অপেক্ষা কখন আসবে সিলেটের ট্রেন। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস এলো সকাল ৭টা ১০ মিনিটে।

দাদার লাঠি হয়ে প্রথমবারের মতো তার ঢাকা দেখতে আসা হলেও ফেরার উৎকণ্ঠা ছিলো আরও বেশি। কারণ প্রথমবারের মতো ট্রেনে ওঠা হবে তার! প্লাটফর্মে তাই আব্দুল্লাহ আল নোমান কথা বললেও তার নাতনির মুখে রা-সরেনি। কিন্তু ট্রেনে ফের দেখা হতেই যেনো পূর্ব পরিচয়ের স্মৃতি মনে পড়লো তার। আগ বাড়িয়ে নিজেই প্রশ্ন করে বসলো ‘থুমি ক্ষিতা সিলট যায়বায়’।

বেশ খানিকটা ভাব জমে উঠতেই জানা গেলো পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে ‘আ জার্নি বাই ট্রেন’ রচনা সেও পড়েছে- কিন্তু অভিজ্ঞতা তার একেবারেই ভিন্ন। স্বপ্নের সেই ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস যেনো পর্বত হয়ে বুকে চেপে বসেছে তার। এবার অপেক্ষা কখন শেষ হবে পথ- কখন নামা যাবে এই ঠাঙালম্বা যান থেকে।  

বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে ফিরলে কালও স্কুলে যেতে হবে না, ছুটি থাকবে আরও একদিন। তাই ট্রেন থেকে নামতে পারলেই রক্ষা।

দরজায় দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখাতো তার হয়নিই, ঠাসা মানুষের ভিড়ে ‘জ’ বগিটা পর্যন্ত ঘুরে দেখতে পারেনি। একদিকে রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ আধুনিক মেডিকেলে চিকিৎসাধীন তার খালা- প্রথমবার ঢাকায় গিয়েও বেড়ানো হয়নি। এবার ট্রেনে উঠেও দেখা গেলো সব আনন্দ গড়ের মাঠ। দাদার কোলে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। পাশে থাকা যাত্রীদের দেখে নোমান হিয়াকে শান্তনা দেন, অ্যানড্রয়েড মোবাইলের তিনি কিছুই বোঝেন না, তাই কিনেই বা কি করবেন।

ট্রেন ঘুরে দেখা যায়, বগিতে টেলিভিশন লাগানোর ব্যবস্থা থাকলেও দেয়ালে এখনও ঝোলেনি টিভি। সাউন্ড সিস্টেম থাকলেও নোয়াপাড়ায় এই সংবাদ লেখা পর্যন্ত একটিবারের কোনো আওয়াজ বেরোয়নি। অধিকাংশ বগির শেষের একটি করে দরজা দখল করেছে ক্যান্টিনের ইজারাদার কোম্পানি মেসার্স ওবায়দুল হক অ্যান্ড সন্স। সেখানেই যেনো গড়ে উঠেছে তাদের মিনি কিচেন! সিংক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে যাত্রীদের বেসিন। আর দুই বগির মাঝখানের অংশ হলো ডাস্টবিন।
বিরক্তি প্রকাশ করলেন পারাবতের যাত্রী ফিরোজ। বললেন, বুঝলেন তো? হকারের উৎপাত বন্ধ হয়েছে- এখন সে জায়গা দখল করেছে ক্যাটার্সরা। চা, কফি, চিপস, চকলেট নিয়ে রীতিমতো হাঁক-ডাক! ওরা আসবে, প্রশ্ন করবে যাত্রীদের কিছু দরকার কি-না চলে যাবে।

এ প্রসঙ্গে ক্যাটার্স নাঈমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন।

এরপর আরও দু’বার দেখা হয়েছে হিয়ার সঙ্গে। তার শুকনো হাসি বলে দেয় তার হিয়া ভালো নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এটি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।