ঢাকা: প্রতিবন্ধীদের সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তি কমাতে ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির পর জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে লিংক করে পর্যায়ক্রমে তাদের স্মার্টকার্ড দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে দেশে ১৫ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছে জানিয়ে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান বলেন, তাদেরকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে।
আগামী ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সমাজসেবা অধিদফতর সারদেশে জরিপ চালিয়ে ১৫ লাখ ১০ হাজার প্রতিবন্ধী মানুষকে শনাক্ত করে একটি শক্তিশালী ডাটাবেজ তৈরি করেছে বলে জানান সচিব।
তিনি বলেন, এখন তাদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে কয়জন প্রতিবন্ধী আছে আগামী জুনের মধ্যে তা পাওয়া যাবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে লিংক করে স্মার্টকার্ডে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টর মতো সব তথ্য থাকবে। চাকরির ক্ষেত্রে তাদের আর প্রতিবন্ধী প্রমাণের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না।
মন্ত্রী জানান, এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এখন আমরা গবেষণা করবো, বিভিন্ন প্রতিবন্ধিতার কারণ উদঘাটন ও তার রাশ টেনে ধরার জন্য উপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করবো, সৃজন করবো যতবেশী সম্ভব প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য বাস্তবানুগ সুবিধা।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে প্রতিবন্ধীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলেও জানান সচিব।
প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন রকম সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, চলতি বছর সাড়ে সাত লাখ অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাথাপিছু ৬০০ টাকা হারে ভাতা দিচ্ছি, এ বছর এখাতে বরাদ্দ ৫৪০ কোটি টাকা। ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রীকে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। ৬৪ জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় ৬৪০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে।
এছাড়া দেশে ১২টি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এটুআই প্রোগ্রামের আওতায় ৬টি ই-লার্নিং সেন্টারে প্রতি কোর্সে ১০০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিবন্ধী শিশুরা পরিণত হচ্ছে দক্ষ জনশক্তিতে।
উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে কর্মক্ষমতা সৃষ্টির জন্যে সমাজসেবা অধিদফতরের আওতায় চালু করা হয়েছে ৬ বিভাগে ৬টি এতিম-প্রতিবন্ধী প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।
প্রতিবন্ধী শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাইকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য জীবনচক্র ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে বলে জানান মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন দেশব্যাপী বিনামূল্যে বিভিন্ন থেরাপিউটিক সেবা নিচ্ছেন বলে জানানো হয়।
সরকার নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ট্রাস্ট গঠনের কাজ শুরু করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অটিজম, বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পলসি ও ডাউন সিনড্রম এ চার ধরনের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের প্রতিবন্ধিতার বিশেষ ধরন ও চাহিদাকে মাথায় রেখে এ ট্রাস্ট তার কর্মকৌশল বাস্তবায়ন করবে।
প্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে দাতব্য বা অনুকম্পার পরিবর্তে মর্যাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন দেশ-বিদেশে অটিজম ও এনডিডি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সুদৃঢ় প্লাটফর্ম তৈরিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখায় বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছেন বলে জানান মন্ত্রী।
কর্মসূচি
প্রধানমন্ত্রী ৩ ডিসেম্বর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বলে জানান সচিব। এছাড়া মিরপুরে প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস