ঢাকা: ‘সরকারের অগণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সম্প্রদায়িক, উগ্রজাতীয়তাবোধ ও গণবিরোধী চেতনার কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা।
তিনি বলেন, আমরা পাহাড়ের মানুষ, মানুষের মত বাস করতে চাই।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯ বছর: স্থানীয় জনগণের ভূমি অধিকার ও বাস্তবায়ন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশন।
সন্তু লারমা বলেন, ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি সাক্ষরের ১৯ বছর পার হলো। কিন্তু শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি। আমার কাছে এর কারণ দিবালোকের মত পরিষ্কার। এ সরকারের মধ্যে অগণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সম্প্রদায়িক, উগ্রজাতীয়তাবোধ ও গণবিরোধী চেতনার কারণেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মোট কথা, শান্তি চুক্তির পরে আগে মিলে পাহাড়ের নিপীড়িত জনতা ৪৬ বছর ধরে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। ’
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ৮ থেকে ১০ লাখ আদিবাসী বাস করে। আর ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম। এরপরও সরকার কেন এত দ্বিধাগ্রস্ত এই চুক্তিটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে। সরকার যদি অসম্প্রদায়িক হয়, গণতান্ত্রিক হয় তা হলে কেন এ চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর কারণ তারা গণবিরোধী, শ্রেণি বিভক্ত, শাসক শ্রেণি’- বলেন সন্তু লারমা।
তিনি আরও বলেন, সবাই বলে পার্বত্য শান্তি চুক্তি আড়ালে হয়েছে। আমি এটা মানতে পারবো না। সরকার প্রধান চুক্তিতে সাক্ষর করবে আর অন্যরা জানবে না, এটা হতে পারে না। আমাদের অধিকার সচেতন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা সবাই এ শান্তি চুক্তির কথা জানে।
সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে আজ পযর্ন্ত কোনো রাজনৈতিক দল কোনো সরকারকেই চাপ দেয়নি। এ চুক্তি বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েছে। এ দেশের সিভিল ব্যুরোক্রেসি পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চায় না। ফলে নীতি নির্ধারকরা পদক্ষেপ নিতে পারে না।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, ১৯ বছর পার হওয়ার পরও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে উন্নয়ন প্রক্রিয়া অংশগ্রহণ করতে না পারা। তারা উন্নয়নের জোয়ারে অংশ নিতে পারেনি।
আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সমস্যার সমাধান করলে পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হবে বলে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, চাকমা সম্প্রদায়ের প্রধান ব্যারিস্টার রাজা দেবশীষ রয় প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এমসি/টিআই