সিলেটের জাফলং থেকে ফিরে: জাফলং, মাঝ বরাবর স্রোতহীন স্বচ্ছ পানির পিয়াইন নদী বহমান। সেই নদীর পশ্চিমসহ সম্ভাব্য সব তীরের সীমানায় স্তরে স্তরে বিছিয়ে রাখা হয়েছে পাথরের স্তুপ।
ওপারে রয়েছে খাসিয়া চা বাগান, পান বাগান, খাসিয়া জমিদার বাড়ি, ঝুলন্ত সেতু, পাহাড় টিলা, প্রবাহমান জলপ্রপাত, গহীন অরণ্য আর পিনপিন নিরবতা।
এসবই জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সামান্যতম রূপের গয়না। এক কথায় জাফলং প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি। খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে এই প্রকৃতি কন্যার অবস্থান। সবমিলিয়ে এই নয়নাভিরাম নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যে ভরা প্রকৃতি কন্যা পর্যটকদের বিমোহিত করে দারুণভাবে।
জাফলংয়ের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে নিয়মিত দেশ-বিদেশের পর্যটকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটে আসেন এখানে। পাশাপাশি এসব পর্যটকদের অনেকেই জাফলংয়ের একটু আগে তামাবিল স্থল বন্দর দেখতে যান।
কিন্তু সড়কের খানাখন্দকে যেন বাধা পড়ছে পর্যটকদের জাফলং যাত্রা। দীর্ঘ সড়কের বড় বড় অংশ জুড়ে উঠে গেছে কার্পেটিং। অসংখ্য স্থান ভরে গেছে ছোট-বড় খানাখন্দে। এছাড়া পাহাড়ি সড়কে রয়েছে অসংখ্য উঁচুনিচু স্থান। ভয়ঙ্কর রূপ নেওয়া সড়কগুলো পর্যটকদের জন্য মারাত্মক আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবে যানবাহনের আসনে বসে থাকা দায়।
সড়কের নির্দিষ্ট স্থানগুলোয় গাড়ি লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। চালক ব্রেক কষার আগেই আসনে বসে থাকা মানুষগুলোকেও লাফিয়ে উঠতে হয়। অনেকেই আসনে থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। পড়ে যাওয়ার অবস্থাও হয় অনেকেরই। ফলে ঝুঁকি নিয়েই পর্যটকদের ভ্রমণ পিপাসা মেটাতে হচ্ছে বলে মনে করেন জাফলং ও তামাবিল স্থল বন্দর দেখতে আসা মানুষজন।
সিলেট নগরী থেকে প্রায় ৬২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলা। আর এ উপজেলায় জাফলং ও তামাবিল স্থল বন্দরের অবস্থান। বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে করে জাফলং ও তামাবিল স্থল বন্দরে যেতে হয়। এর মধ্যে বাস, মাইক্রোবাস, কার, প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনা অন্যতম।
শাফিউল ইসলাম ও সুফিয়া ইসলাম সপরিবারে প্রাইভেটকার নিয়ে জাফলংয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে এসেছেন।
এ দম্পতি বাংলানিউজকে জানান, আগের চেয়ে দিন ছোট হয়ে গেছে। সড়কের দুরাবস্থার কারণে আস্তে গাড়ি চালিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। এ কারণে নির্ধারিত সময়ের একটি বড় অংশ গাড়ির ভেতরের কাটিয়ে দিতে হয়েছে। এতে করে তাদের অল্প কিছু সময় থেকেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
জাফলংয়ের মামার বাজার, বল্লাঘাট এলাকার নাজির হোসেন, আহমেদ জামানসহ একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, দেশের মধ্যে জাফলং অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হলেও এখানকার বিশাল এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন আগেই পাথর ব্যবসা গড়ে ওঠে। এ কারণে বড় বড় পাথরবোঝাই ট্রাক এ সড়কগুলো দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে।
কিন্তু পাহাড়ি সড়কগুলো সেই মানের লোড বহনে সক্ষম করে নির্মাণ করা হয়নি। যে কারণে সড়কগুলো অল্প সময়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পের ওপর।
তাই জরুরি ভিত্তিতে জাফলং ও তামাবিল স্থলবন্দরে চলাচলের সড়কগুলো নতুন করে মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অবশ্যই ধারণ ক্ষমতা নির্ধারণ করে সড়কগুলো নির্মাণে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে মনে করেন পর্যটকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
এমবিএইচ/জেডএস