নড়াইল: অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতি থানার পানিপাড়া গ্রামের “কৃষি পর্যটন কেন্দ্র অরুনিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাব”।
২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছরই শীত মৌসুমসহ বছরের ৮ মাস বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কলতানে মুখরিত থাকে এই পার্কটি।
পাখি সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করায় ১০ বছর আগে থেকেই এলাকাটিকে অনেকেই পাখি গ্রাম নামে চেনে।
এখানে প্রতিদিন বিকেলে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখি এসে গাছের ডালে বসে। রাত যত গভীর হয় পাখির সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে। সারারাত পাখির কলতানে মুখরিত থাকে পুরো এলাকা। ভোর হলেই বেশির ভাগ পাখি আবার উড়ে চলে যায়। বিকেল হলে আবার চলে আসে।
প্রায় ৫২ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাস। এলাকাটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটক আসায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে কয়েকশ’ বেকার যুবকের।
পুরো এলাকা জুড়ে চোখে পড়ে বক, হাঁস, পানকৌড়ী, শালিক, টিয়া, দোয়েল, ময়না, মাছরাংগা, ঘুঘু, শ্যামা, কোকিল, টুনটুনি, চড়ুইসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার পাখির প্রজনন ঘটছে। ডিম থেকে ফুটছে বাচ্চা। বর্তমানে দেশের একমাত্র এই কৃষি পর্যটন কেন্দ্রটি পরিণত হয়েছে পাখির অভয়ারণ্যে।
আর এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে প্রতি নিয়ত দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে অসংখ্য পাখি প্রেমী ও বিনোদন প্রিয় মানুষ।
ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিসহ দেশীয় পাখি ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে আর আসছে। এখানে প্রজননের সুযোগ সুবিধা থাকায় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। সেকারণে বাড়ছে পাখির কলতানও। এই কলতানে সৃষ্টি হয়েছে এক অপরূপ পরিবেশ।
এখানে শুধু পাখিই নয় বরং পাখিদের বাসস্থান হিসেবে রয়েছে নানা প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ। এছাড়া রয়েছে দেশীয় প্রজাতির বেশ কিছু পশুপাখি এবং অনন্য সাধারণ একটি প্রাকৃতিক লেক।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পাখি আমাদের পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী প্রাণী। অতিথি পাখির আগমনের ফলে এলাকার মৎস্য চাষ ও বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও খুবই উপকার হয়।
বিভিন্ন এলাকায় যে সব প্রাকৃতিক জলাশয় আছে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে পাখিদের আবাসভূমি করা উচিত। তিনি আরও বলেন, এক সময় (আগে) আমাদের এলাকায় বিভিন স্থানে অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটত। সেসময় অনেক অসাধু শিকারি পাখিগুলো শিকার করত। ফলে দিনে দিনে অতিথি পাখি আসা কমে যাচ্ছিল। বর্তমানে এই এলাকায় পাখি শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন যথাযথ প্রয়োগ করা হলে পাখি শিকার বন্ধ হবে এবং আগামিতে আরও অনেক বেশি পাখির আগমন ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কৃষি পর্যটন কেন্দ্র অরুনিমা রিসোর্ট গল্ফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি পর্যটন কেন্দ্র বর্তমানে পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এই মৌসুমে এরকম হাজার হাজার পাখির আগমন এদেশে কল্পনাতীত। এলাকাবাসীর সহযোগিতার পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই সব পাখি সংরক্ষণে আমাদের সুবিধা হবে। পাখিদের অভয়ারণ্যের এই মনোরম দৃশ্য উপলব্ধি করে বলা যায়, পৃথিবীর দেশে দেশে এখন কৃষিকে কেন্দ্র করেই পর্যটনের কথা ভাবা উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
আরএ/