ঢাকা: রাজধানীতে দৈনিক অতিরিক্ত ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপাকে পড়েছে ঢাকা ওয়াসা। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, নলকূপ নষ্ট হওয়া এবং পানি সরবরাহ সংক্রান্ত মালামাল ও নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে নির্ধারিত মেয়াদ ও অর্থে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে না।
এখন তাই ‘ঢাকা শহরে অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ’ প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো ও বাড়তি অর্থের দাবি করেছে সরকারি সংস্থাটি।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করেন। বর্তমানে দৈনিক পানির চাহিদা ২১০ কোটি লিটারের বেশি। গ্রীষ্ম মৌসুমে এ চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩০ কোটি লিটার।
ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদনের ক্ষমতা আছে ২৪০ কোটি লিটারেরও বেশি। কিন্তু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং নলকূপ নষ্ট হওয়ায় সেটি সম্ভব হয় না। ফলে গ্রীষ্ম মৌসুমে ঢাকায় পানি ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
অন্যদিকে প্রতি বছর ঢাকা নগরীতে ৫ শতাংশ হারে মানুষ বাড়ছে এবং ২০২০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছাবে। সে সময় দৈনিক পানির চাহিদা হবে ৩০০ কোটি লিটার।
এসব বিবেচনায় প্রকল্পটির আওতায় দৈনিক অতিরিক্ত ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ঢাকা ওয়াসা। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।
কিন্তু নানা কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এবং ব্যয় ৩৮২ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬৩৪ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসা।
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীতে গভীর নলকূপের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। অনেক নলকূপ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এগুলো পুনঃস্থাপনে ব্যয় বাড়ছে। প্রতি বছর গড়ে ১০০টি গভীর নলকূপের প্রয়োজন হচ্ছে, যার মধ্যে ২৫টি নতুন, ৫০টি প্রতিস্থাপন এবং ২৫টি স্ট্যান্ডবাই।
একই কারণে গভীর নলকূপ ও পানির লাইন নির্মাণ সামগ্রীর দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া, নলকূপ কম্পাউন্ডে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন এবং পাম্প হাউজ ও বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে কাজ করছে ওয়াসা। কাজ শেষেও তাই পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ‘ঢাকা শহরে অন্তর্বর্তীকালীন পানি সরবরাহ’ প্রকল্পটির মূল ডিপিপি’র (প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব) একক দর ২০১১ সালের রেট সিডিউল অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যেই শ্রমিকদের মজুরি, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, ট্যাক্স, ভ্যাট ও নির্মাণ সামগ্রী বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। হাউজিং পাইপ, ব্লাইন্ড/কেসিং পাইপ, স্ট্রেইনার, পিভিসি পাইপ, গ্রাভেল, সুইচ, বাল্ব, ড্রেসার কাপলিং, রড, সিমেন্ট ও ইটের দামও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত পানি সরবরাহ অটুট রাখতে ১৬২টি থেকে বাড়িয়ে ৩৭৫টি গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে ৫০টি স্ট্যান্ডবাই রাখতে হবে। ৭০ কিলোমিটারের স্থলে ১০০ কিলোমিটার পানির লাইন নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপাশি ৩০টির স্থলে ১২০টি গভীর নলকূপ রি-জেনারেশন করাসহ আনুষঙ্গিক মালামাল কিনতে আরও সময় ও অর্থের প্রয়োজন।
শেষ সময়ে এসে তাই অতিরিক্ত অর্থ ও সময় না পেলে প্রকল্পটি চলমান রাখা সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছে ওয়াসা।
ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশের নদীগুলো দূষণে ভরা। সুতরাং, পদ্মা-মেঘনার পানি খাওয়ার উপযোগী করতে সারফেস ওয়াটার সরবরাহে যেতে হবে। এটি করতে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময় লাগবে’।
‘সারফেস ওয়াটারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রচুর গভীর নলকূপ লাগবে। কিছু গভীর নলকূপ স্ট্যান্ডবাই রেখেও দিতে হবে, যেন ঢাকাবাসীর পানির সমস্যা না হয়। এগুলো স্থাপনে অর্থ, সময় ও প্রচুর জনবলের দরকার’।
‘সেজন্যই আমরা প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় আরও বাড়াবো। অথবা নতুন প্রকল্প নেওয়ার চিন্তা করছি’- বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
এমআইএস/বিএস/এএসআর