ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘জীবনে কারো আপন হইতে পারলাম না’

রীনা আকতার তুলি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
‘জীবনে কারো আপন হইতে পারলাম না’ ছবি:সুমন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মাইনসে অপমান করে, গালি দেয়, ঘেন্না করে, এইডা কোনো জিনদেগি না, জীবনে কিছুই পাইলাম না, শুধুই অবহেলা, আল্লাহ বানাইছে, চেহারা ভাইয়ের মতোও না, বোনের মতোও না, কাউরে আপন করতে পারলাম না, আপন হইতেও পারলাম না।

ঢাকা: মাইনসে অপমান করে, গালি দেয়, ঘেন্না করে, এইডা কোনো জিনদিগি না, জীবনে কিছুই পাইলাম না, শুধুই অবহেলা, আল্লাহ বানাইছে, চেহারা ভাইয়ের মতোও না, বোনের মতোও না, কাউরে আপন করতে পারলাম না, আপন হইতেও পারলাম না।
 
লোকে কাজ দিতে চায় না, পেটের দায়ে চাঁদা উঠাই, সেই চাঁদার টাকার ভাগাভাগি করতে রাত ভোর হয়ে যায়, জীবনডাই মিথ্যা, মিথ্যা জীবনের গল্প শুইনা কি লাভ।

কষ্টের দানাবাঁধা অভিমানী এ কথাগুলো এক হিজড়া সম্প্রদায় বা তৃতীয় লিঙ্গের এক মানুষের। তার নাম রুবিনা আকতার।

শনিবার ( ডিসেম্বর ০৩) দিবাগত রাত ২টা। রাজধানীর মিরপুর কালশী রোডে সিএনজি অটোরিকশাতে করে যেতে দেখা মেলে তার। অটোরিকশা থামিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন? জবাব মেলে, ‘আমি হিজড়া রুবিনা। ওস্তাদের বাসা থেকে আসলাম। ’

এত রাতে ওস্তাদের বাসা? প্রশ্নের জবাবে রুবিনা জানায় , চাঁদার টাকা ভাগাভাগি চলে মাঝ রাত পর্যন্ত। কখনো ভোর হয়ে যায়। এ জন্য বাসায় ফিরতে দেরি।

রুবিনা জানান, সারাদিন ঘুরে অনেক টাকা চাঁদা ওঠানো হলেও সেই টাকার তারা যে ভাগ পান তা খুবই কম। চাঁদার মোটা অংকের টাকা ওস্তাদের হাতেই যায়।  

রুবিনার আরো অভিযোগ, হিজড়া হওয়ায় শুধু সামাজিকভাবে না, পারিবারিকভাবেও অবহেলিত রুবিনা। ছোট বেলায় মা-বাবা তাকে সহ্য করতে পারলেও পরিবারের ‍অন্য ভাইবোনেরা তাকে অবহেলার চোখে দেখতো। তার সাথে খাবার খেত না, গোসল করতো না, এমকি ঘুমাতেও যেতো না।

ভাই বোনদের অবহেলার কারণে ১০ বছর বয়স থেকেই হিজড়াদের সাথে থাকে রুবিনা। হিজড়াদের কাছেই বড় হয়েছে সে।

 রুবিনা জানায়, তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় লেখাপড়া করতে পারেনি। হিজড়া বলে তাকে লোকে কাজও দিতে চায় না।

রুবিনার অভিযোগ, তাদের কোনো সামাজিক স্বীকৃতি নেই। পারিবারিকভাবেও তারা উপেক্ষিত। লোকে যখন হিজড়া বলে ডাক দেয় তখন মনে হয় এটা গালি।  

তিনি বলেন, বেশিরভাই হিজড়াই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের কোনো আশ্রয় নেই। আর সে কারণেই তারা দলগতভাবে আশ্রয় খোঁজেন।

রুবিনার গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। তার বাবার নাম মো. সেলিম ও মা পাপিয়া বেগম। বাবা মারা গিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
আরএটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।