ঢাকা: বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। উজ্জ্বল ঘন সবুজ রংয়ের মাঝখানে রক্তবর্ণের ভরাট বৃত্ত।
বৃত্তের চারপাশটা সবুজ রংয়ের। যা তারুণ্যের উদ্দীপনা ও বিস্তৃত সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রতীক। দৈর্ঘ্য: প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এর এই জাতীয় পতাকায় রয়েছে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ৩০ লাখ প্রাণ।
নয়মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ছিনিয়ে আনা বিজয়ের এই পতাকাই আমাদের গৌরব। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বিজয়ের পতাকা পেয়েছে বাঙালি জাতি। ডিসেম্বর মাসটি বাঙালির জন্য আবেগের মাস।
আর তাই তো বিজয়ের মাসে, বিশেষ করে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে জমে উঠেছে জাতীয় পতাকার বেচা-কেনা।
রাজধানীর গুলিস্তানের ফুটপাতে পতাকার দোকান নিয়ে বসেছেন রাজু মিয়া। পুরো দোকান সাজানো হয়েছে হরেক রকম সাইজের পতাকা, বিজয় ব্যান্ড, রিবন, স্টিকারসহ লোগো সম্বলিত নানা অনুষঙ্গ দিয়ে।
‘এ মাসের শুরু থেকেই বিক্রি হচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা’- জানালেন রাজু। আরো বললেন, ‘এহন ব্যান্ড আর ছোট সাইজের পতাকাই বেশি লইতাছে মানুষ’।
রাজু জানান, ‘বড় (অফিসিয়াল সাইজ) সাইজের পতাকা ১শ’ ৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের পতাকা ১শ’ ২০ এবং ছোট সাইজের পতাকা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা মূল্যে। তবে মাথায় বাধার জন্য লম্বা ছোট পতাকার মূল্য ১০ টাকা আর ২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সেখান থেকে বড় পতাকা কিনছিলেন ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পারভীন আক্তার। তিনি বলেন, ‘পতাকা হলো স্বাধীনতার প্রতীক। বিজয়ের মাসে স্কুলের জন্য পতাকা কিনছি। এ পতাকা দেখে যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিহাস জানতে পারে’।
কারওয়ানবাজারেও ছোট ভ্যানে করে পতাকা বিক্রি করছেন শফিক। তার দোকানে স্ট্যান্ড পতাকাগুলো বেশি দেখা গেছে। তিনি বলেন, ‘অফিসের টেবিলে রাখনের লাইগা আমার কাছে অর্ডার দেয় অনেকে। একলগে তাই বেশি কইরা বানাই আনছি। সিঙ্গেল সাইজের স্ট্যান্ড পতাকাগুলো বেচি ৬শ’ টাকা আর ডাবল সাইজেরগুলান ১২শ’ টাকা কইরা’।
তার দোকানে বর্তমান লাল-সবুজ জাতীয় পতাকা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালের লাল বৃত্তের মাঝে হলুদ মানচিত্র আঁকা পতাকাও। এ পতাকা মিলছে সেখানকার আরও দু’একটি দোকানেও।
মাথায় পতাকা শোভিত ব্যান্ড লাগিয়ে শাহবাগ এলাকায় পতাকা ফেরি করছিলেন আবুল মিয়া। ঘাড়ের ওপর রাখা বাঁশের মাথায় নানা আকারের পতাকা। তিনি বলেন, ‘বিকি-কিনি খারাপ নয়। দিন শেষে শ’তিনেক টাকা পকেটে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি’।
১৬ ডিসেম্বরের আগে বেচা-কেনা বাড়বে বলেও আশাবাদী আবুল মিয়া।
এদিকে, বিজয় দিবস উপলক্ষে অফিস, বাসা-বাড়ির ছাদ, গাড়িতে ওড়ানোর জন্য বড় পতাকা কিনছেন নগরীর মানুষ। বাস ড্রাইভার-হেলপারদের হাতেও দেখা যাচ্ছে বিজয় ব্যান্ড।
৩নং বাসের ড্রাইভার রহিম মিয়া রাবারের বিজয় ব্যান্ড লাগিয়েছেন। বললেন, ‘বিজয়ের মাস, পতাকা হাতে নিয়ে ড্রাইভারি করতে ভালোই লাগে’।
বাঙালির জাতীয় জীবনে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিন আসে, যখন দেশপ্রেম পরিণত হয় বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে। জাতীয় পতাকা হয়ে ওঠে ঐক্যের প্রতীক, আবেগের বহির্প্রকাশ। আর এ জাতীয় পতাকার আদর্শ ধারণ করতে নানা রঙের পতাকা কিনছেন রাজধানীবাসী। আর তাদের হাতে পতাকা পৌঁছে দিতে কেউ কেউ ফেরি করছেন মাইলের পর মাইল।
চারদিকে লাল-সবুজের এ সমারোহ যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, এ পতাকা ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি সম্মানের বিজয় নিশান। যে বিজয় সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
জেডএফ/এএসআর