ঢাকা: প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তা কিংবা নোটারি পাবলিক- যে কোনো সনদ বা ছবি সত্যায়িত করেন। কিন্তু রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এসব নির্ধারিত কর্মকর্তার কোনো দরকার নেই! কেবলমাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিলেই এক নিমিষে সরকারি কর্মকর্তাদের সিলমোহরে সত্যায়িত মিলে।
শুধু তাই-ই নয়, পুলিশ কিংবা আনসার সদস্যদের সামনেই পাসপোর্ট আবেদন ফরমের পরিপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয় দেড় সহস্রাধিক টাকার বিনিময়ে।
তবে এ কাজটি করতে গিয়ে ভয়ংকর অপরাধ করছে দালাল চক্রের সদস্যরা। নকল করছে সরকারের উচ্চ পদস্থা কর্মকর্তাদের সই ও সিলমোহর!
সম্প্রতি রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সামনে সরেজমিনে গিয়ে এসব চিত্র দেখা যায়।
মোহাম্মদপুর থেকে পাসপোর্ট করতে এসেছেন নুপুর (ছদ্মনাম)। যাবেন বিদেশে। পাসপোর্ট অফিসের সামনে আসতেই দালালদের ডাক শুনে পেছন ফিরলেন। দৌড়ে এসে একজন দালাল কাগজপত্র চেক করে জানালেন ফরমের সব ঠিকঠাক থাকলেও সরকারি কোন গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত হয়নি আবেদনপত্রটি। নুপুর ও তার সঙ্গে থাকা ভাইয়ের চোখে চিন্তার রেখা দেখে এবার আসল কথাটি বললেন রন্টু নামের ওই দালাল।
‘কয়েক মিনিটের মধ্যে এ সমস্যা মিটে যাবে। আসেন আমার সঙ্গে’–বলেই তাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে দ্রুত হাঁটা শুরু করলেন রন্টু। সমস্যা মেটার আশায় নুপুররাও তার পিছু নিলেন। রন্টু থামলেন, পাসপোর্ট অফিসের অদূরে সোনালী ব্যাংকের শাখার সামনে।
সেখানে যেতেই রন্টুর মতো আরও অনেকে নুপুরদের ঘিরে ধরে আগের মতোই নানা অফার দিতে লাগলো। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে গিয়ে রন্টু জানালো ওরা তার কাস্টমার। মুহূর্তেই বাকিরা নুপুরদের ছেড়ে দিয়ে অন্য কাস্টমার ধরার চেষ্টায় গেলেন।
এদিকে এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই হয়ে গেলো নুপুরের আবেদন ফরম ও ছবি সত্যায়িত করার কাজ। আর সত্যায়নে সিলমোহর ব্যবহার করা হলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী মোহাম্মদ ইকতেদারের। অথচ তার অজান্তেই অবৈধভাবে তার সীলমোহরের ব্যবহার করে স্বাক্ষর করলেন এক অর্ধ শিক্ষিত ব্যক্তি।
নুপুর তাদের দিতে বাধ্য হলেন ৪০০ টাকা। দালাল রন্টু ১০০ টাকা সত্যায়িতকারীকে দিয়ে বাকি ৩০০ নিজের পকেটে পুরে আবারও এগিয়ে গেলেন কাস্টমারের খোঁজে। সোনালী ব্যাংকের উল্টো পাশে ছোট ছোট টং ঘর করে এই সেবা (!) দিয়ে যাচ্ছেন রন্টু ও তাদের সহযোগীরা। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও কেউ যেন দেখার নেই।
নুপুরের মতো এ রকম হাজারো নগরবাসী পাসপোর্ট করতে এসে দালালদের খপ্পরে পড়েন। আর দালালরাও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে টং দোকানে এসব অবৈধ কাজ সারেন।
টং দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ‘লাগবে নাকি কোন হেল্প? ফরম পূর্ণ থেকে শুরু করে ছবি তোলানো পর্যন্ত সব কাজ করে দেবো। ’ এভাবে হাঁক ডাক দেয় দালালরা। তাদের ডাকে একটু আগ্রহী এলেই দৌড়ে কাছে এসে জানতে চান কোন সেবা লাগবে। শোনা গেলো- ‘পুরো প্যাকেজ পনের’শ। আছে খুচরা কাজের সেবাও। ’
সত্যায়িত, ৪০০ থেকে ৫০০, ফরম পূরণ ১০০, লাইন ভেঙে গিয়ে আগে ছবি তোলানোর জন্য ৪০০ টাকা। পাসপোর্ট করতে এরকম প্রতিটি ধাপেই টাকা নেয় দালালরা।
এসব বিষয়ে অবহিত করলে মহাপরিচালক বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক উন্নত হয়েছে। এখন অভিযান চালানো হয়। অনেককে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে। আশা করি এদের দৌরাত্ম আরও কমবে। তিনি বলেন, দালালরা তো আর আমাদের আয়ত্মে থাকেনা। ওরা দুর থেকে এসব কাজ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
জেপি/এমএ