ইএসএইচআর (সিলেট) থেকে ফিরে: মনলোভা পাহাড়ি-প্রকৃতির এমন নীরবতা জীবনকে ভরিয়ে দেয়, নৈঃশব্দের আনন্দে ডোবায়। এই নীরবতার মাঝে যেন পর্যটক ডাকছে ‘মধুমালতি’।
কেবল নামের বৈচিত্র্যে নয়, ঘন সবুজ অরণ্যের রিসোর্টের সুইট ও ডিলাক্স রুম ভবন ‘মধুমালতি’ আতিথেয়তায়ও সুনাম কামিয়ে চলেছে। পুরো রিসোর্টই যেন সিলেটের পর্যটনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কয়েকটি হরিণসহ বহু প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এক্সেলসিয়র রিসোর্ট সারাক্ষণই শিশুসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে। এখানে আগতরা রাইড চড়ে কিংবা প্যাডেল বোটে চেপে মেতে ওঠেন নির্মল আনন্দে। বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে অন্যতম গন্তব্য হয়ে ওঠা এই রিসোর্টে রয়েছে শিশু পার্ক, সুইমিংপুল, অডিটোরিয়াম, মিনি চিড়িয়াখানাসহ খেলাধুলা, শরীর চর্চার চমৎকার আয়োজন এবং বিয়ে-জন্মদিনসহ সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের অনন্য সুযোগ।
এক্সেলসিয়র সিলেটের অভিজাত রেস্টুরেন্টে আছে বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান, চায়নিজ, থাইসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের মজাদার সব খাবার। কর্পোরেট ইভেন্ট, হলিডে কিংবা পারিবারিক উৎসব আয়োজনের দারুণ গন্তব্য হতে পারে এ রিসোর্ট। আর মাত্র বছর দুয়েক পরেই হয়তো এক্সেলসিয়র এবং তার মধুমালতির ডাক শুনতে পাবে পুরো বিশ্ব। কারণ, এরইমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা রিসোর্টে রূপ নিচ্ছে এক্সেলসিয়র। এ লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য থেকে অলিম্পিক গেমসের স্থপতি এখানে ছয় মাস অবস্থান করে পুরো রিসোর্ট নকশা করে গেছেন। সাড়ে চারশো প্রজাতির হাজার হাজার বৃক্ষরাজির কোনো একটিও না কেটে অবিকল পাহাড় রেখে কীভাবে আরও ভবনসমৃদ্ধ রিসোর্ট গড়ে তোলা যায়, সেই মাস্টার প্ল্যান দিয়ে গেছেন তিনি।
এই রিসোর্ট থেকেই ভারতের মেঘালয়ের শিলং দেখার অপূর্ব সুযোগ করে দিতে দু’শো ফুট উঁচু পাহাড়ে একশো ফুট উঁচু টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। তখন সেই টাওয়ারে দাঁড়ালে চোখের সামনে ভাসবে দূর মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি। এমনকি এক পাহাড়ের সঙ্গে আরেক পাহাড়ের সেতু গড়ে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে রিসোর্টের সরাসরি চলাচলের সুযোগও তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এমন সব পরিকল্পনা আর স্বপ্নের কথা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল এক্সেলসিয়র রিসোর্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে। তার স্বপ্ন, “চীন-থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ এবং ইউরোপ আমেরিকার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে রিসোর্টটি। এসব দেশের পর্যটন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এসে দেশীয় পর্যটন বিকাশে ভূমিকা রাখবে এক্সেলসিয়র। ”তিনি জানান, রিসোর্টের পুবদিকে পাহাড়ের পাদদেশে ৫ শতাধিক কক্ষের একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। আর পুরো রিসোর্টের অরণ্য ঘেরা পরিবেশে বেশ কয়েকটি কটেজ বানানো হবে। বানানো হবে ৮৫ কক্ষের একটি ভবনও, যেখানে থাকবে হেলিপ্যাড সুবিধা। আগামী জানুয়ারি থেকেই এসব কাজ শুরু হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই রিসোর্টে সুইমিং পুল এবং বারবিকিউ কর্নারসহ অত্যাধুনিক ৫ তারকা হোটেলের সব সুবিধা থাকবে। সাঈদ চৌধুরী বলেন, কেবল নান্দনিক আধুনিকতায় নয়, প্রকৃতি দর্শনেও বিলাসবহুল এ রিসোর্ট হতে পারে অন্যতম গন্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রকৃতি ও বৃক্ষরাজির সঙ্গে পরিচিত করাতে জ্ঞানভাণ্ডার হতে পারে রিসোর্টটি। এখানে আগর, আতর, চন্দন গাছের মতো বিরল বৃক্ষেরও দেখা পাওয়া যায়। রয়েছে সাড়ে চারশো ঔষধি গাছও।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে গেলে ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে সহজেই বাংলাদেশ হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। তখন এরকম বিশ্বমানের আর অপূর্ব নৈসর্গিক রিসোর্টের চাহিদা থাকবে অনেক বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এসএ/এইচএ/