কড়াইল বস্তি থেকে: ‘আল্লাহ আমার পোলাগোরে বাঁচাইছে’ এ কথা বলে বারবার দুই হাত তুলে মূর্ছা যাচ্ছিলেন খোদেজা বেগম। তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের সখিপুর থানায়।
খোদেজার চার ছেলে তিন মেয়ে। বড় তিন মেয়েকে বিয়ে দিলেও চার ছেলে এখনও ছোট। আর এই কড়াইল বস্তিতে তিনি থাকেন প্রায় ১০ বছর ধরে। এখানেই বিয়ে দিয়েছেন তিন মেয়েকে। তবে এ আগুন তার সবকিছু কেড়ে নিয়ে নিঃস্ব করে দিয়েছে। ঘর থেকে এক কাপড়েই বেরিয়ে আসতে হয়েছে খোদেজা ও তার সন্তানদের।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকার গাউসুল আজম মসজিদ প্রাঙ্গণে কেঁদে-কেঁদে ‘আল্লাহ আমার পোলাগোরে বাঁচাইছে’ শুধু এই কথাই বলছিলেন খোদেজা বেগম।
তিনি জানান, রোববার বেলা আড়াইটার দিকে বস্তির ১৯নং ওয়ার্ডে আগুন লাগে। যেখানে প্রায় ৪ শতাধিক বাড়ি ছিল। কেউ-কেউ ঘরে ছিলো, আবার অনেকেই ঘরের বাইরে ছিলো। তিনি অন্যের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। আর তার স্বামী মফিজুল ইসলাম পেশায় একজন চা বিক্রেতা।
ঘরের টিভি, আলনা, খাট ও অন্যান্য জিনিসপত্রসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বলেও জানান খোদেজা।
এদিকে, ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদছেন সোমেলা বেগম। বাংলানিউজকে তিনি জানান, দুপুরে হঠাৎ আগুন লাগলো। তারপর এক মূহর্তে আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। ঘরের ভেতর থেকে একটা বালিশও আনতে পারেননি তিনি।
সোমেলার স্বামী রিকশাচালক। গত দুইদিন ধরে তিনি জ্বরে আক্রান্ত। সোমেলার গ্রামের বাড়ি শেরপুরের দলাকান্দা। সাত বছর ধরে এই বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। এই আগুন তার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে।
অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি বলেন, ‘দুপুরে মাত্র ঘরের পাক করছিলাম। খাওয়াটাও হইলো না। হাতের মুঠে জীবনটা নিয়া বাইচা আইছি। ’
সোমেলা বেগমের ছেলে সমেজ উদ্দিন ও সুমন ক্ষুধার জ্বালায় মায়ের কাছে বারবার খাবারের জন্য বায়না ধরছেন। সন্তানদের খাবার দিতে না পেরে ক্ষণে-ক্ষণে হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠছেন।
শুধু খোদেজা ও সোমেলা বেগম নয়। তাদের মত এমন ১৫টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন গাউসুল আজম মসজিদ প্রাঙ্গণে।
** কড়াইলে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
** কড়াইল বস্তিতে পুড়লো ৪ শতাধিক ঘর-বাড়ি
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এসজে/টিআই