ঢাকা: দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিদিনই যুদ্ধ করতে হয় কড়াইল বস্তির সায়ের আলী, হেলেনা, শর্মীলাদের। এ যুদ্ধে সীমা আরও বেড়ে গেল রোববার (০৪ ডিসেম্বর) অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়।
শেরপুরের শর্মীলা খাতুন। বছর তিনেক হলো ঢাকায় এসেছেন জীবন-জীবিকার তাগিদে। গুলশানের একটি বাসায় কাজ করেন তিনি।
প্রতিদিনকার নিয়মে দুপুরের আগেই নিজেদের জন্য রাতের খাবার রান্না করে কাজে চলে যান শর্মীলা। রাতে এসে স্বামী সন্তান নিয়ে এক সঙ্গে খাবেন। কিন্তু সেই সুযোগ আর হলো না। ফিরে এসে দেখেন কিছু নেই। সব পুড়ে ছাই, দুমড়ে-মুছড়ে পড়ে আছে পোড়া টিনগুলো।
রোববার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর কড়াইল বস্তির ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, আগুনে সব হারানো মানুষগুলো বউ-বাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছেন। দু’একজন বসে ঝিমোচ্ছেন। বেশির ভাগই সব হারানোর বেদনায় পায়চারী করছেন।
আগুনে এ বস্তির ৪/৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
শর্মীলা খাতুনের মতো অসংখ্য মানুষ রয়েছেন যাদের মাথা গোজার ঠাঁই নেই। গরীবের সামান্য সম্বলটুকু কেড়ে নিয়েছে আগুন!
মাজেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, পোলাগুলান (সন্তান) সঙ্গে নিয়ে কোনো রকমে জীবন বাঁচাইছি, কেউ কিছু বের করতে পারেনি।
আব্দুল লতিফ বলেন, শুধু পরনের কাপড় নিয়ে অনেকে বের হতে পেরেছেন। চোখের পলকে আগুন চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো।
পুরোপুরি শীত এখনো আসেনি, তবে এ হালকা শীত ঠেকানোর কাপড়ও নেই অনেকের। জড়ো সড়ো হয়ে ধ্বংসস্তুপের মাঝে বসে আছেন অনেকে। কেউ কেউ আশপাশের আত্মীয়দের কাছ থেকে কাঁথা ধার করে কয়েকজন মিলে কোনো রকম গায়ে জড়িয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
সায়ের আলী জানান, অনেকে ঘরের নারী ও শিশুদের আত্মীয় কিংবা প্রতিবেশীদের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেছে।
লাভলী বেগম বলেন, আমাদের কিছুই নেই। কিছুই রক্ষা করতে পারিনি। সব শেষ হলে গেল।
হেলেনা আক্তার বলেন, আমাদের সাহায্য করা না হলে আমরা কোথায় থাকবো, কি খাবো, কি পরবো।
রোববার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে মহাখালী-বনানী এলাকার কড়াইল বস্তিতে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর এতে চার শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়েছে এবং দগ্ধ হয়েছেন এক নারী।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬
এমইউএম/এসএইচ
আরও পড়ুন... ‘আল্লাহ আমার পোলাগোরে বাঁচাইছে’