ঢাকা: পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে বিভিন্ন দেশের ২৪টি কোম্পানির ১২৫টি প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে সরকার। বেলজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ইটালি, ভারত, চীন ও জাপানের সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি এসব প্রস্তাব দিয়েছে।
দুই চীনা কোম্পানির সঙ্গে বৃহস্পতিবার (০৮ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে আরও তিনটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। চায়না হারবার কোম্পানি বন্দরের মূল অবকাঠামোর কাজ করবে। আর চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড দু’টি চুক্তির মাধ্যমে নদীতীর রক্ষা ও নদী শাসন এবং বন্দরের আবাসন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণ করবে।
ভারতের সরকারি কোম্পানি ‘ইন্ডিয়ান পোর্ট গ্লোবাল’ ও অন্য একটি বেসরকারি কোম্পানি একটি মাল্টিপারপাস কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। এখন চলছে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি। এ খাতে বিনিয়োগ করবে ইন্ডিয়ান এক্সিম ব্যাংক।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত ১৯টি কম্পোনেন্ট (স্তর) নির্ধারণ করেছে সরকার। ওই ১৯ স্তরে আগ্রহী বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি নির্বাচনের বিষয়ে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
তবে সবার আগে শুরু হবে ৩৫ কিলোমিটার রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণ, নদীশাসন, মূল অবকাঠামো নির্মাণ, আবাসন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ।
মন্ত্রণালয় বলছে, পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে চালু করতে চায় সরকার। প্রকল্পগুলো চালু করতে কয়লা আমদানিতে পায়রা বন্দরই ব্যবহার করতে হবে। বন্দরের মূল চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ দ্রুত শুরু করা গেলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা জাহাজ যোগে জেটিতে আনা সম্ভব।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ‘মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা’ অনুসারে ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ মিটার গভীরতার চ্যানেল ড্রেজিং, একটি মাল্টিপারপাস ও একটি বাল্ক টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো তৈরি করে বন্দর কার্যক্রম শুরু করেছে। ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে শুরু হলে মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিযুক্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচ আর উইলিংফোর্ড বহির্নোঙর থেকে রাবনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ৩৫ নটিক্যাল মাইল দীর্ঘ চ্যানেলের ড্রেজিং প্ল্যান প্রণয়ন করে। পরিকল্পনা অনুসারে ১৬-২১ মিটার ড্রাফটের মাদার ভ্যাসেল চলাচল উপযোগী চ্যানেল সংরক্ষণে জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল ও সংরক্ষণ ড্রেজিং করা হবে।
এরই মধ্যে বেলজিয়ামের কোম্পানি জান ডি নুলের সঙ্গে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এককভাবে সুয়েজ খাল খননের অভিজ্ঞতা রয়েছে কোম্পানিটির।
পায়রা সমুদ্র বন্দরে নৌ-প্রযুক্তিতে বিশ্বখ্যাত নেদারল্যান্ডের রটারডাম বন্দরের ছোঁয়া থাকছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এইচ আর উইলিংফোর্ড পায়রা বন্দরের একটি অংশকে রটারডাম বন্দরের আদলে ডিজাইন করেছে। নেদারল্যান্ড নিজেও পায়রা বন্দরের এ কম্পোনেন্টে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানান, তৃতীয় সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম চালুর সুবাদে সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে এ অঞ্চলের সামাজিক ও অর্থনৈতিক চালচিত্র। বন্দর ঘিরে তৈরি হবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখানে থাকছে নৌ-বাহিনীর ঘাঁটি বিএনএস শেরে বাংলা। বরিশালের সঙ্গে পটুয়াখালীর চারলেনের সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে। মূল চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২০১৮ সালের মধ্যে ১২ মিটার বৃহৎ আকারের জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো সম্ভব হবে।
নৌ-সচিব অশোক মাধব রায় বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পায়রার পোতাশ্রয়ের স্বাভাবিক গভীরতা ১২ মিটার থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত রয়েছে। এটি প্রায় ১১ কিলোমিটার বিস্তৃত ও ৪ কিলোমিটার প্রশস্ত। যা কন্টেইনার, বাল্ক, সাধারণ কার্গো, এলএনজি, পেট্রোলিয়াম ও যাত্রী টার্মিনাল নির্মাণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
একই সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল, তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিমেন্ট, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, সার, তেল শোধনাগার ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ আরও অনেক শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন নৌ-সচিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
আরএম/এএসআর