ঢাকা: দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের প্রধানতম ভরসা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে দুদক।
এদিকে চলতি বছরের ১০ মাসে দুদক বিভিন্ন মাধ্যমে অনিয়ম এবং দুর্নীতির মোট অভিযোগ পেয়েছে ৮৮৫২টি। এর মধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে ৪৬৭টি এবং অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়েছে ৬৪০টি অভিযোগ।
এছাড়া মামলা দায়ের হয়েছে ২৮০টি এবং চার্জশিট দাখিল হয়েছে ৪৫৬টি। আর নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ১৫৮টি। দুদকের মামলায় সাজা হয়েছে ৮০টির আর খালাস পেয়েছে ৭৮টি। এর মধ্যে দুদকের মামলায় সাজার হার ৫১ শতাংশ।
অপরদিকে আলাদা ইউনিট না থাকায় আমলে নেওয়া অভিযোগগুলো তদন্ত, আসামি গ্রেফতারসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পুলিশের সহায়তা নিতে হয় দুদককে।
এ বিষয়ে দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক সময় আসামিকে আটক করি। এছাড়া আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে এসে আসামিদের দুদকে ২-৫ দিন অবধি রাখতে হয়। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে তদন্তকারী কর্মকর্তা গেলে তাদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়। ফলে এই সমস্ত কাজে সাধারণত স্থানীয় পুলিশের সহায়তা নেওয়া হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে দ্রুততার সাথে পুলিশের সহায়তা না পাওয়ায় বাঁধাগ্রস্ত হয় কাজের গতি।
তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন পুলিশ তার নিজের কাজে ব্যস্ত। অপরদিকে দুদকের দায়ের করা মামলার আসামিকেও আটক করতে হবে। সেক্ষেত্রে দুদকের পক্ষে চলমান গতিতে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে দুদককে সময় মতো কাজ করতে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সময়ের প্রয়োজনেই তাই নিজস্ব সশস্ত্র ইউনিট (স্পেশাল ফোর্স) প্রয়োজন বলে মনে করেন।
দুদকের নিজস্ব ইউনিট (স্পেশাল ফোর্স) প্রয়োজন বলে দাবি করে সচিব আরও বলেন, আমাদের একটি নিজস্ব সশস্ত্র ইউনিট প্রয়োজন। যেমন রেলওয়ের রয়েছে। তবে শুধু বললেই দুদক একটি ইউনিট গড়ে তুলতে পারে না। এ জন্য সরকারের অনুমোদনেরও প্রয়োজন আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মফিজুর রহমান বলেন, সক্ষমতা বৃদ্ধিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের নেওয়া উদ্যোগকে সমর্থন দেওয়া উচিত। কেননা দুদককে মানুষ আরও বেশি কর্মঠভাবে দেখতে চাই। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দুদকের কর্মকাণ্ডগুলোতে মানুষ আস্থাও অর্জন করছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেসব সংস্থা দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে তাদের বিশেষ ফোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে নেই। ফলে সবাই মিলে যদি আমরা দুদককে সমর্থন করি ও দুর্নীতি প্রতিরোধে তাদের সাথে থাকি তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের উদ্যোগের যথার্থতা রয়েছে। দুদকের বিশেষ বাহিনীর দাবিটির পেছনে অবশ্যই যুক্তি আছে। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এই বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। কেননা উন্নতশীল অনেক দেশেই দুর্নীতি প্রতিরোধে বিশেষ বিশেষ বাহিনী রয়েছে। যারা দুর্নীতি প্রতিরোধে জোরালোভাবে কাজ করে থাকে। তাহলে আমাদের মতো উন্নতশীল একটি দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে কেন একটি বিশেষ বাহিনী থাকবে না?
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
এসজে/এমজেএফ/