সাভার, ঢাকা: ১৯৭১ সালের হায়নাদের কথা এখনো ভুলতে পারিনি। সেসময় পাশবিক অত্যাচার, ও নির্যাতনে চোখের সামনে মরতে দেখেছি কয়েকশ’ নারী পুরুষকে।
কান্না জড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বীরাঙ্গনা শেখ ফাতেমা আলী।
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে পাক হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায় ফাতেমাকে। তার বাবা ছিলেন ভাষাসৈনিক শেখ আতিয়ুর রহমান। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহায়তা করতেন। কখনো খাবার দিয়ে আবার কখনো মুক্তিসেনাদের প্রাণরক্ষায় লুকাতে সহায়তা করে। এভাবেই মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন এই সহযোদ্ধা।
১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে গর্ভবতী মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে নৌকায় করে বাড়ির দিকে রওনা হচ্ছিলেন বাবা আতিয়ুর। অনেক কষ্টে মেয়েকে নিয়ে নদী পার হলেও রক্ষা পাননি পাক সেনাদের হাত থেকে। নৌকা থেকে পাকিস্তানী সেনারা ফাতেমাকে ধরে নিয়ে যায় তাদের ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পে শুধু ফাতেমাই নয় শত নারীর চোখ বাধা আর্তনাদ শুনেছেন তিনি। কেউ কেউ এই নর পিশাচদের হাত থেকে রক্ষা পেতে গলায় ওড়না বা চুলের মাধ্যমে আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন। সে কারণে নারীদের চুল কেটে দিতেন এবং ফাঁস লাগানোর মতো কাপড় গায়ে রাখতে দিতেন না। এভাবেই দেখতে দেখতে দেড় মাস পেরিয়ে যায়।
অক্টোবর মাসে পাকিস্তানী সোনদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে পাকিস্তানীরা মুক্তিসেনাদের দাপটে পিছু হোটতে শুরু করে। পরে সেই ক্যাম্প থেকে কয়েকশ’ নারীকে উদ্ধার করা হয়।
সেই নারীদের একজন বর্তমানের বীরাঙ্গনা শেখ ফাতেমা আলী। স্বাধীনতা পেলো দেশ, সেই সঙ্গে ফাতেমাও যেন এক রকম স্বাধীনতা পেলেন। গ্রাম ছাড়া হলেন তিনি। হারালেন বাবা, মা, স্বামী এমনকি গর্ভে থাকা সন্তানও।
একা একা জীবনের পথ চলা শুরু করেলেন ফাতেমা। ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নার্সের কাজে যোগদান করেন তিনি। সেই সঙ্গে জীবনসাথী হিসেবে পান মুক্তিযোদ্ধা আলী আহামদকে। কিন্তু সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই মিলেনি ফাতেমার স্বীকৃতি। দুঃখ কষ্ট আর অভাবে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার যাদুরচরে ছোট এক রুমেই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আরএ