বগুড়া: বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর খোলা আকাশের নিচে মৃত জন্ম নেওয়া শিশুর মরদেহ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হয়েছে।
ঘটনার ১৯দিন পর শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গাড়ীদহ প্রাইমারি স্কুল এলাকায় অবস্থিত কবরস্থান থেকে ওই নবজাতকের মরদেহ তোলা হয়।
পরে নবজাতকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শজিমেক) মর্গে পাঠানো হয়।
এসময় জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিকসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) বুলবুল ইসলাম বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) শিশুটির বাবা ইলিয়াছ হোসেন বাদী হয়ে শেরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
দণ্ডবিধির ৩১৫ ও ৩০৪ এর (ক) ধারায় মামলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের চিকিৎসক মোস্তফা আল্লাম তালুকদার পিয়াল ও নার্স সুষমা রানীকে আসামি করা হয়।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুজ্জোহা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে আবেদন করেন।
পরে জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. তায়েব-উর-রহমান আশিককে দায়িত্ব দিয়ে আদালতের বিচারক অভিজিৎ রায় মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
এর আগে ২৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) দিনগত রাত অনুমান ১১টার দিকে উপজেলার গাড়ীদহ গ্রামের চাতাল শ্রমিক ইলিয়াছ উদ্দিনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মাজেদা বিবি প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে আসেন।
তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
ওয়ার্ডের নার্স সুষমা রানী অন্তঃসত্ত্বা নারীকে পাশের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করার কথা বলেন। রাত অনুমান ১টার দিকে মহিলা ওয়ার্ডের প্রসব কক্ষ থেকে মাজেদা বিবিকে বের করে দেওয়া হয়।
নিরুপায় হয়ে স্বামী ইলিয়াছ উদ্দিন তার স্ত্রীকে অন্য স্থানে যাওয়ার উদ্দেশে বের হন। ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাস্থ্য কমপেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে খোলা আকাশের নিচে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কন্যা সন্তানের জন্ম দেন মাজেদা বিবি। তবে ওই নবজাতকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
শেষ অবধি ঘটনাটি দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।
শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব একেএম ফজলুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে আসেন।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারী অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সবিতা রানী মুখার্জি।
পাশাপাশি বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নুরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটির সদস্যরা হলেন, দুপচাঁচিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল ওয়াদুদ ও সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. হাসিনা পারভীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এমবিএইচ/এএটি/এসএইচ