ঢাকা: দেশে যতোগুলো বেইলি ব্রিজ আছে, সেগুলো আর থাকবে না। বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে কংক্রিকেটর ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রাধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সড়ক বিভাগের অধীনে ৮৭টি ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি ব্রিজ রয়েছে। এসব সেতু দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন ৫২ লাখ ২৪ হাজার মানুষ। এ শঙ্কা দূর করতে ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব বেইলি ব্রিজের পরিবর্তে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।
এ লক্ষ্যে ১৪৭ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে একনেক সভায়। প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়ার সময় সভার সভাপতি একনেকের চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, দেশে আর বেইলি ব্রিজ থাকবে না। সব কংক্রিটের করতে হবে।
মুন্সীগঞ্জে ৮৭টি ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি সেতুর মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ১৯টি। সেতুগুলোর মধ্যে তিনটি রয়েছে কেরাণীগঞ্জ, হাসাড়া, বিরটারা, সিংপাড়া, কাজলপুর ও নাগেরহাট সড়কে। ১০টি সেতু রয়েছে মুন্সীগঞ্জের হাতিমারা, কুনদের বাজার ও শ্রীনগর সড়কে। পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে নিতমলী, সিরাজদীখান, কাকালদী, ফতুল্লা, লৌহজং সড়কে অবস্থিত। এর মধ্য থেকে প্রকল্পের মাধ্যমে ২১টি বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে কংক্রিটের নির্মাণ করা হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে রাজস্ব ভবনের কাজ। ৩০তলা ভবনটি নির্মাণ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার প্রকল্প চেয়েছে। তবে এটি একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এনবিআর নতুন ভবনটি পুরনো বিমানবন্দরের কাছে। এটি এয়ারফোর্সকে দেওয়া হয়েছে। এর পাশে ৩০তলা ভবন করা ঠিক হবে কি-না- সে বিষয়ে বেবিচকের (বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। তারা (বেবিচক) ছাড়পত্র দিলেই প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।
৯৪১ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘গুচ্ছগ্রাম ২য় পর্যায়’ প্রকল্পটিরও অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক সভায়। গুচ্ছ গ্রামের সংখ্যা ৩৪০টি থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার করা হয়েছে। পুনর্বাসিত পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি মানুষও আশ্রয়হীন থাকবেন না। সবার জন্যই বাস্থানের ব্যবস্থা করবো’।
সভায় ২৬ হাজার ৪১১ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১৫টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা সরকারি খাত থেকে মেটানো হবে।
প্রকল্পগুলোর মধ্যে ‘চাহিদাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। এছাড়া ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চাহিদাভিত্তিক নতুন জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প’ এরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুমোদিত ‘সদর দফতর ও জেলা কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬৩ কোটি টাকা।
‘দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের ব্যয় ৬১ কোটি টাকা এবং ‘রাজশাহী হাইটেক পার্ক’ স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি টাকা এবং ‘চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড’ প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘৩৭ জেলা শহরে পানি সরবরাহ’ প্রকল্পেরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
অনুমোদিত ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইম্যানের বহিঃসীমানা দিয়ে লোপরোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ৩২০ কোটি টাকা।
২৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান ১১টি ছড়ার পাশে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ এবং জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। ৩ হাজার ২৫৩ কোটি ৭৬ টাকা ব্যয়ে ‘খুলনায় ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইনড সাইকেল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পেরও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় একনেক সভায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর