ঢাকা: যাদের নিজের ধর্মের ওপর আস্থা নেই এবং ধর্ম পালনের ভান করে তারাই ধর্মের নামে সংঘাত সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে এবং বাংলাদেশের প্রথম কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও কে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সত্যিকারে যাদের নিজের ধর্মের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে তারা অন্যায় পদক্ষেপ নিতে পারে না। আসলে যারা ধর্ম পালনের ভান করে, তারাই ধর্মের নামে সংঘাত সৃষ্টি করে। ’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজের ধর্ম যথাযথভাবে পালন করি। আমার ধর্মের ওপর আমার বিশ্বাস ও আস্থা আছে। তাই আমি অন্য ধর্মকে সমানভাবে সম্মান করি। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি বিশ্বাস করি এই বিশ্বটাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। তাহলে এই পৃথিবীর সব কিছু মহান রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি। এখানে কোনো সংঘাত, দ্বন্দ্ব, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কোনো কিছুরই স্থান নাই। মানবতাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়।
সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকারের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এনেছে। কাজেই এ মাটিতে প্রত্যেকটা মানুষ তার অধিকার নিয়েই বসবাস করবে। ’
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম যার-যার উৎসব সবার। বাংলাদেশের মানুষের সেই উদারতা আছে। বাংলাদেশের মানুষ উদার, অনেক বেশি সহনশীল। বাংলাদেশের মানুষ অন্যকে সম্মান করতে জানে। ’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে সাম্প্রদায়িতকতাকে উস্কে দিয়ে সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হয়েছিলো উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ আবার জেগে ওঠেছে। ’
বঙ্গবন্ধুর উদ্বৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্ম পবিত্র জিনিস। ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারবে না।
যার-যার ধর্মকে সম্মানজনক অবস্থায় নিয়ে যেতে আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন সময় কয়েকজন ধর্ম গুরুকে হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝে মধ্যে ছোটখাট ঘটনা ঘটে। অন্য ধর্মের মানুষ, এমনকি মুসলমানদের বেছে-বেছে হত্যা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। ’
বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময়কার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক উচ্চাবিলাস চরিতার্থ করার জন্য জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে-পুড়িয়ে মারতে পারে। এমন আন্দোলন করেই নাকি, তারা সরকার উৎখাত করবে। ’
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে মানুষের সেবায় কাজ করছেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি মনে করি, আমি জনগণের সেবক। মানুষের সেবা করে যাবো। ’
প্যাট্রিক ডি’ রোজারিওকে পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশের কার্ডিনাল নির্বাচিত করা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বলে কথা না। বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে এটা আমাদের জন্য গর্বের, আমাদের জন্য আনন্দের। ’
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ১২১ জন কার্ডিনালের মধ্যে বাংলাদেশের একজন বাঙালিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যিনি পোপ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, আবার প্রার্থীও হতে পারবেন। ’
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী বড়দিন উপলক্ষে কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, বাংলাদেশ খ্র্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও।
** ** ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা যাবে না
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এমইউএম/টিআই