ঢাকা: ইসরায়েল নির্ভরতা থেকে বের হতে চায় ফিলিস্তিন। এজন্য বন্ধুপ্রতীম বাংলাদেশের সহায়তা চেয়েছে দেশটি।
২০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি নির্ভর এ বাজার থেকে বৈরি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে হটাতেই এ সহযোগিতা চায় ফিলিস্তিন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্মের পর থেকেই দেশটি ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন পীড়ন ও দখল অব্যহাত রেখেছে। প্রতি বছরই বহু নিরাপরাধ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হাতে নিহত হচ্ছেন। তারপরও প্রায় সব বিষয়েই ইসরায়েলের ওপর নির্ভর করতে হয় ফিলিস্তিনিদের।
তিনি বলেন, প্রতি বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি বাণিজ্য করে থাকে ফিলিস্তিন। এর ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রফতানি হয় শত্রুরাষ্ট্র ইসরাইল থেকে। বাকি ৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি হয় জর্ডান, মিশর ও তুরস্ক থেকে।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ফিলিস্তিনের সঙ্গে আমাদের সামান্য বাণিজ্য আছে। আমরা সে দেশ থেকে সামান্য পরিমাণে খেঁজুর আমদানি করে থাকি। আমাদের কিছু পণ্যও সে দেশে যায়। তবে এ বাণিজ্য হয়ে থাকে তৃতীয় দেশ হয়ে। আমাদের ব্যবসায়ীরা এদিকে নজর দেন না। হয়তো যুদ্ধ বিগ্রহের কারণেই এ অনিহা। কিন্তু এতো কিছুর পরও ফিলিস্তিনের অগ্রযাত্রা কিন্তু থেমে নেই। তাদের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষি, কৃষিপ্রযুক্তি এবং হালকা ও মাঝারি শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ফিলিস্তিন। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গত ১১ ডিসেম্বর এসে এ প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো’।
গত ১১ ডিসেম্বর ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রশিদ মালিকি সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন।
ওই দিন ফিলিস্তিনি পররাষ্টমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ জন্মলগ্ন থেকে ফিলিস্তিনের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু। বাংলাদেশের রয়েছে পাকিস্তানের কাছ থেকে লড়াই করে স্বাধীন হওয়ার অভিজ্ঞতা। ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে বাংলাদেশ একটি অনুপ্রেরণার নাম।
তিনি বলেন, ‘কেবল রাজনৈতিকভাবেই নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তাদের স্বাধীনতার আন্দোলন মিথ্যা ছিলো না। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের যে লড়াই চলছে, তার অনুপ্রেরণাও তাই বাংলাদেশ। আমরাও একদিকে লড়াই করছি, অন্যদিকে অর্থনৈতিক শক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন বাংলাদেশের মতো বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা দরকার’।
তিনি বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুর দিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে। আশা করি, সে সময় দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি ঐতিহাসিক চুক্তি সাক্ষর হবে। আমরা এখন সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি’।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানান, রাজনৈতিকভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনকে সব সময় সমর্থন করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সে দেশের মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ইয়াসির আরাফাতকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তিতে তুরস্কের সে সময়ের প্রেসিডেন্ট সুলেমান ডেমিরেল ও দক্ষিন আফ্রিকার কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তিনিও বাংলাদেশে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশটির সঙ্গে কিভাবে বাণিজ্যিক সম্পর্ক শক্তিশালি করা যায় সে বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। দেশটির বাজার হতে পারে বাংলাদেশের রফতানির নতুন ক্ষেত্র। আমরা এ বিষয়ে কাজ করবো’।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
আরএম/এএসআর