শাজাহানপুর (বগুড়া) ঘুরে: বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আমরুল ইউনিয়নের একটি গ্রাম লক্ষ্মীপুর। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের নয়মাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে পুবে পাকাসড়ক ধরে প্রায় ৬ কিলোমিটার গেলে সাঘাটা গ্রাম শেষ।
দেখা মিলবে তিনটি সড়কের মিলনমোহনা। সেখানে দাঁড়িয়ে আছে পাতাঝরা পাইকড় গাছ। রয়েছে একটি পুকুর। পুকুরের পাড়ের একপাশ হয়ে একটি মেঠো পথ আঁকাবাঁকা হয়ে উত্তরে চলে গেছে।
ধূলো উড়িয়ে কিছু দূর সামনে এগুলেই লক্ষ্মীপুর গ্রাম। ধূলোওড়া পথ পাড়ি দিতেই চোখ আটকে যাবে হলুদের সমারোহে। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলদে সর্ষে ফুল। এমন একটি সর্ষেক্ষেতের কাছে যেতেই দেখা গেলো অসংখ্য কাঠের বাক্স।
পলিথিনে মুড়ে দেওয়া হয়েছে বাক্সগুলো। আটটি কাঠের ফ্রেম রয়েছে সেই বাক্সের ভেতরে। রয়েছে মোমের তৈরি সিট। প্রত্যেক বাক্সে রয়েছে একটি রানী মৌমাছি। সেই রানীকে নিয়ে চলছে সর্ষেফুল থেকে মধু আহরণের পুরো আয়োজন। কারণ একেকটি বাক্সে এক রানীর সঙ্গে রয়েছে সাড়ে তিন হাজারের মত মৌমাছি।
সর্ষেক্ষেতের পাশে বাক্সগুলো সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝখানে তাঁবু টানিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন মধু আহরণকারীরা। এক সপ্তাহ পর বাক্সগুলো খোলা হয়। সংগ্রহ করা হয় মধু। প্রত্যেক বাক্স থেকে এ পদ্ধতিতে ৮-১০কেজি হারে মধু পাওয়া যায়।
এ প্রক্রিয়ায় সর্ষেফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে মধু সংগ্রহ করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। মধুতে মধুময় হয়ে উঠেছে তাদের জীবন।
রমজান, তমিজ, সানোয়ার, শামীম ও সোবহান তাদেরই কয়েকজন। প্রায় মাসখানেক ধরে তারা এ গ্রামে অবস্থান করে মধু আহরণ করছেন।
এই যুবকরা বাংলানিউজকে জানান, নভেম্বরের শেষ থেকে সর্বোচ্চ দেড় মাস পর্যন্ত সর্ষেফুল থেকে এ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহ করা এ মধু খাঁটি ও ভেজালমুক্ত।
তারা আরো জানান, প্রাণ, স্কয়ার, এপিসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্রাণ্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো এসব খাঁটি মধু ক্রয় করে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বড় পাইকাররাও অর্ডার দিয়ে এসব মধু কেনেন। পাইকারি হিসেবে প্রতিকেজি মধু সর্বোচ্চ আড়াইশ’ টাকা দরে বিক্রি করা হয় বলেও জানান এসব যুবকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, এ জেলায় চলতি মৌসুমে ২৫হাজার ৫শ’ ৫৫হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ করা হয়। এসব সর্ষেফুল থেকে বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ চলছে।
এই কৃষিবিদ বলেন, সরিষা ফুল থেকে আহরণকৃত মধু খাঁটি। গুণে মানেও অত্যন্ত ভাল। কারণ এ মধুতে কোনো ভেজাল থাকে না। প্রত্যেক বছর এভাবে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে অনেকটা সহজেই বাড়তি টাকা আয় করেন এ কাজে নিয়োজিতরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এমবিএইচ/জেএম