ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হলুদের সম্রাজ্যে রাজ্যের প্রজা ‘প্রজাপতি’

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
হলুদের সম্রাজ্যে রাজ্যের প্রজা ‘প্রজাপতি’ সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত প্রজাপ্রতি। ছবি: আরিফ জাহান

কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি। বিরাজ করছে বসন্তের আবহ। মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদের সমারোহ। চোখ জুড়ানো এ দৃশ্য চোখের দৃষ্টি সীমাকেও গেছে ছাপিয়ে।

বগুড়া: কুয়াশায় মোড়ানো প্রকৃতি। বিরাজ করছে বসন্তের আবহ।

মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে হলুদের সমারোহ। চোখ জুড়ানো এ দৃশ্য চোখের দৃষ্টি সীমাকেও গেছে ছাপিয়ে।

সরিষার খেতে খেতে উড়ে বেড়াচ্ছে রং-বেরংয়ের প্রজাপতি। ডানা ঝাপটে বসছে গাছের ডগায়। ডানা মেলে ইচ্ছে ঘুড়ির মতো গাছ থেকে গাছে ভেসে বেড়াচ্ছে ওরা।

এছাড়াও দেখা মিলবে মৌমাছি, হলুদিয়া-নীলরঙা পাখিসহ নাম না জানা আরো অনেক পোকামাকড়। এদের বসত সরিষা খেতজুড়ে। ফুলের পাতায় বা গোড়ায় ক্ষণিকের বিশ্রাম নেয় এরা।

প্রজাপতি বা পোকামাকড়ের খাদকরা আশ-পাশে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। ফিঙে ও শালিকের মত শিকারীদের উৎসব চলে খেতে খেতে। মাঝে মধ্যেই এসব শিকারীদের পেটে চলে যায় রঙিন প্রজাপতিসহ পোকামাকড়গুলো।

হলুদ নিয়ে এতো সব কথা। এতো সব গল্প। এসবই যেন কোনো এক রাজ্যের রাজকুমারীর রূপকথার গল্প।

রাজকুমারীর গায়ে হলুদ মাখাতে এসেছে সেই রাজ্যের সব প্রজা। হুমড়ি খেয়ে প্রজারা পড়ছে হলুদের সম্রাজ্য ‘সরিষা খেতে’। রঙ নিচ্ছে আর রাজকুমারীর কাছে ছুটছে ওরা। কখনো দলবেঁধে আবার কখনো দলছুট হয়ে।

সরিষা মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ মাতিয়ে দেবে সবাইকে। এছাড়া দিনের আলোয় সরিষা খেতে থাকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন।

সবমিলিয়ে সরিষার মৌ মৌ গন্ধ শহুরে জীবনের বিরক্তিকর ভাব অনেকটা ভুলিয়ে দেবে আপনাকে। একে বায়ু বিশুদ্ধকরণ ঘ্রাণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

সরিষা একটি তৈল উৎপাদক দ্বি-বীজপত্রী উদ্ভিদ বা ফসল। প্রত্যেক বছর মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত মাসব্যাপী এ ফসলের চাষ চলে। প্রাপ্ত বয়স আসতে সময় লাগে ৭৫-১০০দিন।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলায় কমবেশি জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা।

এরমধ্যে সদর, শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও গাবতলী উপজেলায় কৃষকরা বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা লাগিয়েছেন।

লাগানো সিংহভাগ খেতের সরিষা গাছে ফুল এসেছে। আবহাওয়া এ পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় আবাদও বেশ ভাল হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা খেত পরিচর্যা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাঠে-প্রান্তরে শোভা পাচ্ছে হলুদের অপরূপ দৃশ্য।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ২৫ হাজার পাঁচশ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষ করা হয়েছে।

এরমধ্যে বারি-৯, ১৪ ও ১৫, টোরি-৭ ও সেতি জাতের সরিষা অন্যতম।

জাবেদ আলী, শহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানীসহ একাধিক সরিষা চাষী বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে ফলনও বেশ ভাল হবে বলেও তারা আশাবাদী।

আর ভালো ফলন হলে উৎপাদন ব্যয় বাদে বিঘা প্রতি প্রায় ছয় হাজার টাকা লাভ হয়। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে আবহাওয়া ও বাজার দরের ওপর- জানালেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, জমিতে লাগানো সরিষা বর্তমানে তিন ধরনের অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে ফুল, ফুল ঝড়া ও দানা গঠন।

এক সপ্তাহ পর থেকে কিছু কিছু জমিতে সরিষা কাটা মাড়াই শুরু হবে। চলতি বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।

সরিষা গাছের শুকনো গাছ পাতা জ্বালানি, খৈল, গবাদি পশুর খাদ্য ও সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় বলেও জানান কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬

এমবিএইচ/এএটি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।