বেনাপোল (যশোর): বাংলাদেশকে ডিজিটাল ঘোষণা হলেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর।
এখনও অফিসিয়াল অনেক কাজ সম্পাদন করা হয় হাতে-কলমে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বন্দরে সিসি ক্যামেরা থাকলে এসব অনিয়ম অনেকাংশে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তারা বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন বৈঠকে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ওপর জোরদাবি জানালেও কারো কোনো গরজ নেই। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিষয়টি তারা ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সাল থেকে বেনাপোল বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। এ বন্দর থেকে ভারতের কলকাতা শহরের দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। কলকাতা থেকে রওনা হয়ে চার ঘণ্টায় একটি ট্রাক আমদানি পণ্যের চালান কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পৌঁছায় বেনাপোল বন্দরে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি।
বেনাপোল বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমদানি পণ্য প্রবেশদ্বারসহ দুই কিলোমিটার বন্দর এলাকা জুড়ে কোথাও কোনো সিসি ক্যামেরা আজ পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি। প্রয়োজন ছাড়া বন্দরের মধ্যে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ থাকলেও অবাধে বহিরাগতরা প্রবেশ করছেন। বন্দরের রাস্তাঘাট ও পণ্যাগারের বেহাল দশা। চুরি হওয়া আমদানি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বন্দরের সামনেই নামে-বেনামে বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে।
ব্যবসায়ীদের ধারণা, এসব অব্যবস্থানা দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করায় ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে পর পর পাঁচ বছর এখানে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থা আনসারের পিসি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, চলতি বছরের ১৬ নভেম্বর দায়িত্ব পালনের সময় চোর সিন্ডিকেটের হামলায় তাদের আনসার সদস্য ফিরোজ খুন হয়।
আমদানিকারক বিল্লাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে তার আমদানিকৃত ২৫ লাখ টাকার পণ্য পুড়ে যায়। বন্দরে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা থাকলে এসব ঘটনা হয়তো ঘটতো না।
আমদানি-রফতানি সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বেনাপোলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর আজ পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার আওতায় আসেনি এটা দুঃখজনক। অথচ বেনাপোল বন্দরের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে বাণিজ্যক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাধীন, রয়েছে শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত এসি ওয়ারহাউজ, চোরাচালান প্রতিরোধে স্কানিং ব্যবস্থাসহ আরও অনেক আধুনিক ব্যবস্থা। যার একটিও আধুনিক সুবিধা নেই বেনাপোল বন্দরে। এতে লোকসানের মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্য কমিয়ে দিচ্ছে।
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি বৈঠকে উন্নয়নের ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখানে নজরদারি কম। সার্বক্ষণিক অনেকটা অব্যবস্থানার মধ্য দিয়ে চলছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখানে সুনজর দিলে প্রতিবছর যে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে তার দ্বিগুণ রাজস্ব সরকারি কোষাগারে দেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের সিসি ক্যামেরা লাগানোর পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের একাধিকবার জানানো হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোর কিছু কিছু উন্নয়ন কাজ পর্যায়ক্রমে চলছে বলে জানান তিনি।
বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ২০৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ৮ কোটি ৭১ লাখ, ২০১৩-১৪-তে ঘাটতি ১৩৪ কোটি ৭৩ লাখ, ২০১২-১৩ তে ঘাটতি ৪৫২ কোটি ৮৯ লাখ এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতি ১৯৪ কোটি টাকা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভারত থেকে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে আমদানি হয় ১২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৩ মেট্রিক টন পণ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
আরবি/আরএ