বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) জানায়, ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় পোশাক শিল্পের কয়েকজন ক্রেতা নিহত হন। এই খবর পুরো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতারা বাংলাদেশের আসার বিষয়ে অনীহা দেখায়।
ক্রেতাদের সব শর্ত মানার পরও মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে মূল্য বাড়াচ্ছেন না ক্রেতারা। ২০১৭ সালে এই শিল্পের উদ্যোক্তাদের কাছে মূল্য সক্ষমতাই বড় চ্যালেঞ্জ।
২০১৭ সালে মূল্য সক্ষমতাই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে মন্তব্য দেশের পোশাক শিল্পের প্রথম সারির উদ্যোক্তা বিজিএমইএ এর সাবেক সভাপতি ও এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মূল্য সক্ষমতাই ২০১৭ সালে আমাদের দেশের পোশাক শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে। হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় পোশাক শিল্পের বেশ কয়েক জন বিদেশি ক্রেতা নিহত হন। তখন আমাদের একটা বড় ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। তবে, ২০১৬ সালে তেমন কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা না থাকায় উৎপাদন কাজ এগিয়েছে ভালো। তাছাড়া একর্ড, এলায়ান্স এর শর্ত অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কারখানায় নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে যথার্থভাবে। কিন্তু তারপরও ক্রেতারা মূল্য বাড়াতে রাজি নয়। আমাদের খরচ বাড়লেও মূল্য না বাড়ায় নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
মূল্য সক্ষমতা অর্জন করতে সরকারের নীতি সহায়তা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজিএমইএ এর এই সাবেক সভাপতি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের মূল্য সক্ষমতার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর বিষয়ে নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি (অর্থ) মোহাম্মদ নাসির।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মূল্য সক্ষমতা অর্জন না করতে পারলে ২০১৭ সালে অনেক উদ্যোক্তাকেই বাজার থেকে সরে যেতে হবে। আর এই মূল্য সক্ষমতায় অর্জন করতে হলে অন্যান্য সব দিকের পাশাপাশি নজর দিতে হবে উৎপাদনশীলতার ওপর। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের উৎপাদনশীলতার হার যখন ৫৫ শতাংশ, তখন বাংলাদেশের হার মাত্র ৪০ শতাংশ। একর্ড, এলায়ান্স এর শর্ত অনুযায়ী কারখানা নিরাপদ করা হচ্ছে, গ্রিন কারখানা তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু তারা মূল্য বাড়াচ্ছেন না। মূল্য বাড়ানোর কথা বললেই তারা মুক্ত বাজার অর্থনীতির দোহাই দিয়ে অন্য দেশের দিকে চলে যেতে চান।
বিজিএমইএ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের রফতানির প্রায় ৮৫ শতাংশই আয় হয় পোশাক শিল্প থেকে। ২০১৫ সালে পোশাক শিল্পের রফতানি আয় হয়েছে প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার। দেশের কর্মসংস্থানেও বড় ভূমিকা রাখছে পোশাক শিল্পে।
বাংলাদেশের বর্তমানে প্রায় ৪৪ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক রয়েছেন। গার্মেন্টস শিল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প। এই ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্পে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক। এই এক পোশাক শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে নানা শিল্প।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
ইউএম/পিসি