ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভাঙা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডে ধসে পড়া ডিএনসিসি মার্কেট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
ভাঙা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডে ধসে পড়া ডিএনসিসি মার্কেট ভাঙা হচ্ছে আগুনে ধসে পড়া ডিএনসিসি মার্কেট/ছবি: রানা

ঢাকা: ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধসে পড়া গুলশান-১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট ভাঙা শুরু হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের প্রায় ১৯ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টায় ডিএনসিসির একটি বুলডোজার দিয়ে মার্কেটের ধসে পড়া অংশ ভাঙা শুরু হয়।

টানা ১৯ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও ডিএনসিসি কাঁচা বাজারের আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ধসে পড়া ভবনের ভেতর থেকে কিছুক্ষণ পর পরই কুণ্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

ভেঙে পড়া ভবনের ফাঁক দিয়ে মাঝে মধ্যেই বেরিয়ে আসছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ।
 
দোকান মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, ডিএনসিসি মার্কেটের যে অংশটুকু ধসে পড়েছে, সে অংশটুকু মূল ডিএনসিসি মার্কেট থেকে আলাদা। এটি একটি আলাদা বিল্ডিং। এ বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ছিল কাঁচাবাজার। আর দ্বিতীয় তলায় ছিল কসমেটিকস, মুদি ও মনোহারি দোকান।
 
এসব দোকানে ফারফিউম, বডিস্প্রে, সেন্ট, এয়ার ফ্রেশনার, হেয়ারস্প্রে, লোশানসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পদার্থ ছিল। সেগুলো বিস্ফোরিত হয়ে কিছুক্ষণ পরপর আগুনের লেলিহান জিহ্বা ধসে পড়া মার্কেটের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে।
 
কিন্তু ধসে পড়া ভবনের উপর বা পাশ থেকে পানি ছিটিয়ে ভেতর পযর্ন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ধসে পড়া মার্কেটটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাত সোয়া ১০টায় মার্কেটের পূর্ব-দক্ষিণ পাশ থেকে ভাঙতে শুরু করে ডিএনসিসি। তবে হাল্কা একটি বুলডোজার দিয়ে যে গতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাতে কবে নাগাদ ভাঙার কাজ শেষ হবে- সে বিষয়টি নিয়ে দোকান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে নানা রকম কানাঘুঁষা চলছে।
ধসে পড়া ডিএনসিসি মার্কেট থেকে সরানো হচ্ছে মালামাল 
ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ধসে পড়া ভবন থেকে ক্রমাগত ধোঁয়া বের হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আগুনও জ্বলে উঠছে, তাই পাশের ভবন গুলশান শপিং সেন্টার রক্ষায় ডিএনসিসি মার্কেটের ধসে পড়া অংশের স্মোক ফায়ার (ধোঁয়াগ্নি) নিষ্ক্রিয় করা দরকার।
 
এদিকে ডিএনসিসি মার্কেটের পশ্চিমাংশের বেশিরভাগ দোকান থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সোমবার (২ জানুয়ারি) গভীর রাতে অগ্নিকাণ্ডের পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই দোকানের মালামাল সরানোর কাজ শুরু হয়।
 
একদিকে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়, অন্যদিকে দোকান মালিকরা তাদের দোকান থেকে মালপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে থাকে।
 
দোকান মালিকরা জানান, কাঁচাবাজার থেকে ডিএনসিসি মার্কেটের নিচ তলার পেছন দিকের অধিকাংশ দোকান পুড়ে গেছে। সামনের দিকে দোকান ও উপর তলার বেশিরভাগ দোকান-ই অক্ষত রয়েছে। কিন্ত ধোঁয়া আর পানিতে এসব দোকানের মালপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
 
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় ডিএনসিসি মার্কেটের দোতলায় গিয়ে দেখা যায় ‘গ্যালাক্সি স্পোর্টস’ থেকে লোকজন দিয়ে মালাপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন দোকান মালিক এম আর মুকুল। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, প্রায় ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। সব নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচণ্ড ধোঁয়া আর পানিতে ভিজে মূল্যবান মালপত্র শেষ হয়ে গেছে। তারপরও মনের সান্ত্বনার জন্য এগুলো উত্তরার গোডাউনে নিয়ে যাচ্ছি- যদি ভেতর থেকে ভালো কিছু পাওয়া যায়।
 ডিএসনসিসি মার্কেটের ভগ্ন রূপ
পাশের দোকান থেকেই বাইরে থেকে আমদানি করা দামি পাঞ্জাবি, শার্ট, টাইসহ বিভিন্ন ধরনের ইনটেক পোশাক বক্স ও কার্টুন বের করছিলেন আরেক দোকানি। পানিতে ভেজা ও ধোঁয়ায় ময়লা হয়ে যাওয়া বিদেশি ব্র্যান্ডের এসব কাপড়-চোপড় নির্ধারিত মূল্যে ক্রেতা সাধারণের হাতে পৌঁছানোর আশা ছেড়ে দিয়েছেন দোকান মালিক সাব্বির আহমেদ।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বসুন্ধরা সিটি ও গুলিস্তানে আমার আরও দোকান আছে। এগুলো এখন গো-ডাউনে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এর বেশিরভাগই বিক্রি করার মতো অবস্থায় নেই।
 
ডিএনসিসি মার্কেটের নিচতলায় কথা হয় মুকুল ফার্নিচারের সত্ত্বাধিকারী মো. মুকুল হোসেনের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শুধু মালপত্র নয়, অনেক দোকানদার লাখ লাখ নগদ টাকাও দোকানে রেখে যেতেন। সব শেষ হয়ে গেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এজেড/এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।