ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘দাদনই মোগো একমাত্র ভরসা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০১৭
‘দাদনই মোগো একমাত্র ভরসা’ ইটভাটায় নারী শ্রমিকদের কাজের দৃশ্য

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা): ‘ইট ভাটায় কাজ শুরু করনের আগে ভাটার মালিক মোগো পুরো পরিবারে ৩৫ হাজার ট্যাহা ‘দাদন’ (কাজের জন্য অগ্রিম যা মজুরি থেকে কাটা হবে না) দিছে। দাদনের ট্যাহার লেগাই মোরা ভাটায় কাম করি। দাদনই মোগো একমাত্র ভরসা’। কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিলেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নে মোল্লারহাট এলাকার মোল্লা ব্রিকেসর নারী শ্রমিক মাহিনুর।

উপজেলার কোন্ডা ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকায় যতদূর চোখ যায় ততদূর দেখা যায় শুধু ইটভাটার চিমনি। এসব ইটভাটায় যেসব শ্রমিকরা কাজ করেন তারা কেউ এই এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা নন।

তারা দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এসেছের ইটভাটায় কাজ করার জন্য। যতদিন ভাটায় কাজ থাকে ততদিন তারা ইটভাটাতেই থাকেন। কাজ শেষ হয়ে গেলে তারা অন্যত্র গিয়ে বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

রৌদে শুকানো হচ্ছে ইট

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে মাহিনুর জানান ইটভাটার নানান অজানা কথা। ‍ তিনি জানান, তার দুই ছেলে, স্বামী এবং তিনি নিজেই মোল্লা ব্রিকসের ভাটায় কাজ করেন। তারা একেক জন একেক ধরনের কাজ করেন। আর এই কাজগুলোকে ডাকা হয় ভিন্ন ভিন্ন নামে। তার স্বামী নাসির পেদা ভাটায় ‘মুখ কাটা’ (ইট তৈরির জন্য মাটি প্রস্তুত করা) কাজ করেন। সপ্তাহে মজুরি পান ৭০০-৮০০ টাকা। তিনি নিজে ‘জিঞ্জি’ (শুকনো ইট উল্টে দেওয়া) কাজ করেন। সপ্তাহে মজুরি পান ৪০০-৫০০ টাকা। এছাড়া তার দুই ছেলে মাসুম ও সুমন ‘ধন্দি’ (ইট প্রস্তুতের সময় কারিগরকে সহায়তা করা) কাজ করে। তারা মজুরি পায় সপ্তাহে ৬০০-৭০০ টাকা করে। এছাড়া যারা ইট প্রস্তুতের কাজ করেন তাদের বলা হয় ‘কারিগর’। যারা ভাটায় ইট টানার কাজ করে তাদের বলা হয় ‘রেজাই’। প্রতিটি ইটভাটায় কারিগর ও রেজাইদের কদর সবচেয়ে বেশি।

ইটভাটায় নারী শ্রমিকদের কাজের দৃশ্য

মাহিনুর বাংলানিউজকে বলেন, এতো কম মজুরিতে আমাগো সংসার চলে না, হেরপরও কাম করি। মৌসুমের ছয় মাস ভাটায় কাম করি। বছরের বাকি ছয় মাস অন্য জায়গায় কাম করি। এহানে কাম করনের সুবিধা হইলো কাজ শুরু করার আগে একসঙ্গে দাদনের কিছু টাকা পাওয়া যায়।

এই টাকায় সংসার কেমন চলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে আগে কাজ তারপর সংসার। কাজ করলে পেটে ভাত পড়বো এটাই আমাদের সংসার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৭
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।