এছাড়াও বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের বিজ্ঞাপনগুলোও উচ্চ আওয়াজে বাজোচ্ছেন। অনেকে আবার নিজের পণ্য বিক্রি করতে হাত মাইকে নানা সুরে ডাকছেন ক্রেতাদের।
মূল গেট দিয়ে ঢুকতেই গোল চত্বর। চত্বর ঘিরে রয়েছে বেশ কয়েকটি মাইক। তাতে একই সঙ্গে শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন। দর্শনার্থী অভিযোগ, মেলায় ঘুরতে এসে শব্দের জন্য বেশিক্ষণ টেকা যাচ্ছে না। উচ্চ শব্দে বাজার কারণে নিজেদের কথাগুলোও অনেক সময় শোনা যাচ্ছে না। ফলে এই বিজ্ঞাপনগুলো এক প্রকারের শব্দ দূষণ করছে মেলায়।
মেলায় ঘুরতে এসেছেন রওনক জাহান। তিনি বলেন, আমি সাধারণত জোরে কথা বলতে পারি না। কিন্তু মেলায় ঢোকার পর আস্তে কথা বললে নিজের কথা নিজেই শুনতে পাচ্ছি না। সেক্ষেত্রে আমাকে চেচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে যা খুবই বিরক্তিকর।
ছোট ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মোশাররফ হোসেন। বললেন, গেট দিয়ে ঢোকার সময় মাইকের কাছ দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন আমার বাচ্চা শব্দে ভয় পেয়ে কান্না শুরু করেছে। অনেক চেষ্টার পর ওর কান্না থামানো গেছে। কিন্তু শুধু আমার বাচ্চার ক্ষেত্রে নয়, এভাবে জোরে শব্দ চলতে থাকলে সব বাচ্চারই সমস্যা হবার কথা।
মাইকের কাছ দিয়ে যাবার সময় কানের ভেতরে আঙুল দিয়ে যাচ্ছিলেন স্কুল পড়ুয়া রাসেল। জানালেন, ‘এমনিতেই আমার মাথার সমস্যা আছে। মেলায় এসে এই শব্দে মাথা ব্যথাটা বেড়েছে। তাই মাইকের কাছ দিয়ে যাবার সময় কানে হাত দিচ্ছি। ’
সুমিতা রানী বেশ বিরক্ত মাইকের শব্দে। বললেন, ফোনে কথা বললে শোনা যাচ্ছে না। এই শব্দ তো কেউ শোনেই না। শুধু শুধু এত জোরে এতগুলো মাইক বাজাচ্ছে। এই শব্দ খুবই অসহ্য।
মেলা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, এবারের বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন পয়েন্টে স্পিকার রয়েছে মোট ১৪টি, হর্ন (মাইক) রয়েছে ১০টি, চারটি পয়েন্টে সেট করা হয়ে ৪টি এলইডি টেলিভিশন সেট করা হয়েছে। যেগুলোতে সারাদিনই টানা চলছে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন।
এদিকে মজো, আলীবাবা ডোর, আরএফএলসহ বড় বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের উদ্যোগে মাইকে বাজাচ্ছে তাদের বিজ্ঞাপন। অনেক জায়গায় হাত মাইকে নানাবিধি লোভনীয় অফারের ডাক দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এতসব শব্দে দর্শনার্থীদের বিরক্তের সীমা থাকছে না।
এসম্পর্কে জানতে চাইলে মজো কোম্পানির মেলা ইনচার্জ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের অফিস থেকে কথা বলা আছে, তাই দর্শনার্থীদের জানানোর জন্য নিজেদের বিজ্ঞাপন মাইকে বাজানো হচ্ছে। তবে, আমরা অনেক আস্তে সাউন্ড দিয়ে বাজানোর চেষ্টা করছি।
এবারের মেলায় বিজ্ঞাপনের প্রকাশনের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ বেতার।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেতারের চিফ এনাউন্সার মাহবুব সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চমূল্য দিয়ে এই মাইকগুলোর টেন্ডার নেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। যদি অল্প শব্দে বিজ্ঞাপন বাজানো হয় তাহলে বিজ্ঞাপনদাতারা মনে করেন তাদের বিজ্ঞাপন বাজানো হচ্ছে না। তাছাড়া যারা ইন্ডিভিজুয়্যালি বিজ্ঞাপন বাজাচ্ছেন তাদের জন্যও আমাদের সাউন্ড একটু জোরেই বাজাতে হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এরপরেও সাউন্ড তদারকি করার জন্য ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে বিভিন্ন কোম্পানির মাইক সিস্টেম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সবসময় তদারকি সম্ভব নয় বলে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকার পর তারা আবারো স্পিকার চালু করে। ফলে, শব্দের মাত্রা দ্বিগুণ হারে বেড়ে যায়।
তাছাড়া বিজ্ঞাপন আর মিউজিক না বাজলে মেলা একটা মৃত্যুপুরির মতো মনে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
জেডএফ/পিসি