ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যেভাবে গুলশান হামলার অপারেশন কমান্ডার মারজান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
যেভাবে গুলশান হামলার অপারেশন কমান্ডার মারজান

ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার মাধ্যমে চরম নৃশংসতায় নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় আইএস মাতাদর্শে অনুপ্রাণিত নব্য জেএমবি। আর ইতিহাসের এই ঘৃণ্যতম জঙ্গি হামলার অপারেশন কমান্ডার ছিলেন নুরুল ইসলাম মারজান। 

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে যিনি এক সহযোগী সাদ্দামসহ নিহত হন মারজান।

মেধা ও বিচক্ষণতার কারণে মারজান ছিলেন নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর অন্যতম আস্থাভাজন।

সেজন্য দ্রুততম সময়েই চলে আসেন নব্য জেএমবির নেতৃত্ব পর্যায়ে এবং পালন করেছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মারজানই একমাত্র ব্যক্তি যিনি নব্য জেএমবির সবচেয়ে কম বয়সী অপারেশন কমান্ডার ছিলেন।

গুলশান হামলার পরবর্তী সময় থেকে নব্য জেএমবির বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যালোচনা করে মারজান সম্পর্কে এমনই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের পর্যালোচনায় বেরিয়ে এসেছে মারজান কীভাবে জঙ্গিবাদে জড়ালো এসব তথ্যও।

গোয়েন্দারা জানান, মারজানের খালু সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ ছিলেন পুরনো জেএমবির সূরা সদস্য। তিনি ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায়ও জড়িত ছিলেন। পরে নব্য জেএমবির উত্থানের সময় উদ্বুদ্ধ হয়ে যোগ দেন এই দলে।

মারজানের বোন খাদিজার স্বামী হাফিজুর রহমান সাগর ওরফে জয়পুরহাটের সাগরও ছিলেন পুরনো জেএমবির সক্রিয় সদস্য। বাড়ি জয়পুরহাটে হওয়ায় বাংলাভাইয়ের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। আর যেহেতু সীমান্ত এলাকায় তার বাড়ি তাই দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সখ্যতা ছিল তার। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সে জানতো এবং পুরনো জেএমবিরও অস্ত্র সরবরাহও করত সে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মারজান ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের ছাত্র। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সে শিবিরের সদস্য ছিল। সে প্রথমে ভগ্নিপতি সাগরের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। জঙ্গিবাদে জড়ানের পর তার দেখা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের নব্য জেএমবির সামরিক কমাণ্ডার রাইসুল ইসলাম খান ওরফে ফারদিনের সঙ্গে। ফারদিনও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিবিরের সদস্য ছিলেন। এর ফলে ফারদিনের সঙ্গে মারজানের সখ্যতা গড়ে ওঠে।

২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল রাতে বগুড়ার শেরপুরের কুঠিরভিটা গ্রামের একটি বাড়িতে গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন ফারদিন ও জঙ্গি জুয়েল।  

পরদিন কাউন্টার টেরোরিজম ট্রান্স-ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সদস্যরা ওই বাড়ি থেকে ২০টি তাজা গ্রেনেড, অন্তত ৩০০ গ্রেনেড তৈরির কাঁচামাল ও সরঞ্জাম এবং ৭.৬৫ ক্যালিবারের ৪টি বিদেশি পিস্তলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ করেন। ফারদিন ছিলেন আরেক জঙ্গি বোমা শাকিলের ভগ্নিপতি।

ফারদিনের মাধ্যমেই নব্য জেএমবিতে যোগ দেয় মারজান এবং পরিচয় হয় নব্য জেএমবির প্রধান সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সঙ্গে। মারজান আরবী সাহিত্যের ছাত্র হলেও সে ফরাসি, ইংরেজিসহ বেশ কয়েকটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তার মেধা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতায় অল্প দিনের মধ্যেই তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হয়।

এদিকে, মারজানের খালু সোহেল ও ভঙ্গিপতি সাগর দু'জনই গ্রেনেড বানানোয় পারদর্শী। গুলশান হামলাসহ নব্য জেএমবির প্রায় সব গ্রেনেডই সরবরাহ করে তারা।

২০১৬ সালের ২ নভেম্বর রাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে নয়টি পিস্তল, গ্রেনেড তৈরির উপকরণ ৭৮৭টি ডেটোনেটরসহ আবু তাহের, মিজানুর রহমান, সেলিম মিয়া ও তৌফিকুল ইসলাম ওরফে ডা. তৌফিককে আটক করে সিটিটিসি।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিটিটিসি সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) আহমেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সোহেল ও সাগর গুলশান হামলাসহ নব্য জেএমবির গ্রেনেড তৈরির মেকার। আর গ্রেফতার হওয়া এই চক্রটি গুলশান হামলার ব্যবহৃত অস্ত্র ও গ্রেনেড তৈরির উপকরণ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ঢাকার শেওড়াপাড়ার আস্তানায় নিয়ে আসে। সেই আস্তানাতেই সোহেল ও সাগর গুলশান হামলার জন্য গ্রেনেড তৈরি করেন।

তিনি বলেন, গ্রেফতার হওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী এই চক্রের সঙ্গে বড় মিজান ও ছোট মিজান নামে আরও দুইজন জড়িত। সোহেল ও সাগরসহ অন্যান্য জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মারজান কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় বসে পুরো গুলশান হামলা মনিটরিং করেন। ইন্টারনেট বন্ধের আগ পর্যন্ত গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গিদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করেন তিনি। হামলার সময় জঙ্গিরা যে ছবি বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছিল সেই ছবি মারজানই রিসিভ করে বাইরে ছড়িয়ে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৭

পিএম/পিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।