কিন্তু বিষয়টি মানতে নারাজবাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) বা সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে না।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা যায়, টাউন সার্ভিসগুলো সারাদিন লোকাল হয়ে চালচল করে। আর সকাল কিংবা বিকেলে অফিস টাইমে হয়ে যায় সিটিং সার্ভিস। শুধু তাই নয়, ভাড়াও হয়ে যায় দ্বিগুণ। অফিসের যাওয়ার তাড়া আর বাসায় ফেরার প্রয়োজনের কথা ভেবে টাকার চিন্তা কেউ না করলেও ঠিকই গলদঘর্ম হতে হয় গন্তব্যের বাস পেতে। কারণ সকাল আর বিকেলে অফিস টাইমে কোনো গাড়িই আর যাত্রী নিতে চায় না। এতে রুটের শেষ আর শুরু ছাড়া পুরো পথেই ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়।
বাংলামোটর মোড়ে দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো গাড়িতে উঠতে পারেননি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আহসান কবীর। বিরক্ত হয়ে এ যাত্রী বলে ওঠেন, দেশে বিআরটিএ বলতে কিছু কি নেই? বিকেল ৫টায় অফিস ছুটির পর থেকে দাঁড়িয়ে আছি অথচ কোনো গাড়িই নিচ্ছে না।
ফার্মগেট এসে দেখা গেল, এক যাত্রী অনেকক্ষণ বাসের বাম্পার ধরে দৌড়ে গেলেন উঠতে। কিন্তু কন্ডাক্টর কিছুতেই দরজা খুললেন না। অবশেষে হতাশ হয়ে আগের জায়গাতেই ফিরে এলেন। জামান চৌধুরী নামে এ যাত্রী বাংলানিউজকে বলেন, আর ভালো লাগে না। টাকা দিয়েও গাড়ি পাওয়া যায় না।
আইন অনুযায়ী সিটিং সার্ভিস বলে কিছু নেই। অথচ রাজধানীর সব রুটেই চলে এই ‘সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং’। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে সিটিং সার্ভিসের নামে তো হয়রানি হয় না। শুধু তাই নয়, আইন অনুযায়ী, একটি বাস যখন রুট পারমিট নেয়, সেখানে যে স্টপেজগুলোর কথা উল্লেখ থাকে, তা অবশ্যই পালনযোগ্য।
কিন্তু একটি বাস যখন হঠাৎ সিটিং হয়ে যায়, তখন স্বভাবতই আর কোনো স্টপেজেই দাঁড়ায় না। অনেক সময় বাস না দাঁড়ানোয় যাত্রীদের কন্ডাক্টরকে চলন্ত বাস থেকে টেনে নামাতেও দেখা যায়। আবার একই কাজক রে কন্ডাক্টররা। তারা ঠেলে ফেলে দেয় যাত্রীদের।
এসব বিষয়ে বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে কখনই আসেনি, যে বাসগুলো সিটিং হয়ে যায়। এটা আপনাদের পর্যবেক্ষকণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই।
মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো মিরপুর পর্যন্ত কোথাও দাঁড়ায় না। যদি কোথাও যাত্রী নেমে যায়, তবেই কেবল সেখানে সমসংখ্যক যাত্রী তোলা হয়। আবার উত্তরা থেকেও মতিঝিলগামী বা মিরপুর থেকে মতিঝিল, সাভার থেকে মতিঝিলসহ সব রুটেই একই অবস্থা। এক্ষেত্রে নামকরা কিছু লোকাল বাস কেবল ব্যতিক্রম। ৬ নম্বর, ৮ নম্বর, ৩ নম্বরসহ কয়েকটি সার্ভিসই কেবল সব স্টপেজে দাঁড়ায় এবং যাত্রী নামায়-ওঠায়।
অন্যদিকে যত কাউন্টার সার্ভিস আছে বা যেগুলো যাত্রীদের টিকিট সরবরাহ করে তাদের কেউ রুট পারমিটের কোনো তোয়াক্কা করে না। ‘সিটিং সার্ভিস’ ঘোষণা দিয়ে কোনো বাস চালানোর বিধান না থাকলেও সে নামে দিব্যি তারা ব্যবসা করে যাচ্ছে। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত রয়েছে ৫টি। অথচ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না।
বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক মাসুদ আলম এ বিষয়ে বলেন, সাংবাদিকরা যেভাবে ঘুরে ঘুরে দেখেন, সেভাবে আমাদের দেখা সম্ভব হয় না। বিষয়গুলো জানলাম, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
ইইউডি/এএ