উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় মাছ চাষি সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুরের মহিষবাথান এলাকা ও কুঞ্জবন এলাকায় আত্রাই নদে ৭৬টি খাঁচায় মাছ চাষ করেছেন ৩৫ জন মাছ চাষি।
মাছ চাষের নতুন এ পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবকরা নিজস্ব উদ্যোগে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করতে শুরু করেছেন।
খাঁচায় মাছ চাষ করছেন মহিষবাথান গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি মহিষবাথান মৎস্যজীবী সমিতির একজন সদস্য। তার কোনো জলাভূমি নেই। নদীতে মাছ ধরে ও মৌসুমের সময় অন্যের জমিতে কামলার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
তিনি বলেন, ছয়-সাত মাস আগে একদিন উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক মহিষবাথানে এসে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের জন্য ২০ জনের একটি দল গঠন করতে বলেন। দল গঠন করার পর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১০টি খাঁচা তৈরি ও মাছের পোনা ছাড়ার জন্য ২ লাখ টাকা সরকারি অনুদানও দেওয়া হয়।
অনুদানের টাকায় ড্রাম, নেট ও বাঁশ দিয়ে মহিষবাথান খেয়াঘাট এলাকায় আত্রাই নদের ওপর ১০টি খাঁচা তৈরি করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে বগুড়ার আদমদিঘী থেকে মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছের পোনা এনে খাঁচায় ছাড়েন। পরে ওই দলের সদস্যরা নিজেদের খরচে আরও ১০টি খাঁচায় মাছ ছাড়েন। কিছুদিন আগে পাঁচটি খাঁচা থেকে ৭৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন তারা।
তাদের মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে একই এলাকায় দুই বন্ধু মনজেল হোসেন ও বুলবুল আহমেদ আত্রাই নদে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন।
তারা দু’জন তিন মাস থেকে ১৫টি খাঁচায় মাছ চাষ করছেন।
তারা জানান, জিআইপাইপ, নেট ও ড্রাম দিয়ে ১০টি খাঁচা তৈরি করতে তাদের খরচ পড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাঁশ, নেট ও ড্রাম দিয়ে পাঁচটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। হ্যাচারি থেকে পোনা এনে রাখার জন্য বাঁশ ও নেট দিয়ে একটি বড় হাঁফা (বড় খাঁচা) তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা।
প্রতিটি খাঁচায় ১ হাজার থেকে ১২শ’ পিস করে ১৪টি খাঁচায় প্রায় ১৫ হাজার পিস তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছেন। আর একটি খাঁচায় পরীক্ষামূলকভাবে পাঙ্গাস মাছ চাষ করছেন। মাছের পোনা ছাড়তে খরচ পড়েছে ৯০ হাজার টাকা।
মনজেল হোসেন বলেন, ডিগ্রি পাশ করে বাড়িতে বেকার বসে ছিলাম। নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি দেখে আমি ও বুলবুল খাঁচায় মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নিই। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। গত বছরের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে খাঁচায় মাছ ছাড়ার পর মাত্র আড়াই মাসে প্রতিটি মাছের ওজন ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। আর ১৫-১৬ দিন পর মাছ বিক্রি করা যাবে। আশাকরছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি খাঁচা থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হবে।
মহিষবাথান সিবিজি (কমিউনিটি বেইসড গ্রুপ) দলের নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকারি উদ্যোগে আরও বেশি সংখ্যক চাষিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিলে এবং খাঁচায় মাছ চাষে উদ্যোগী বেকার যুবকদের স্বল্পমূল্যে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে এই পদ্ধতি আরও প্রসার লাভ করবে। এতে এলাকার বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারবে।
মহাদেবপুর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, ‘বেকার সমস্যা দূর ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশে মহাদেবপুরে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এলাকার মানুষজনের মধ্যে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সিবিজি প্রকল্প দেখে অনেকে এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আমাদের কাছে আসছে। প্রশিক্ষণ নিতে চাচ্ছে। আমরাও তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছি। ’
তিনি আরো বলেন, স্বল্প পুঁজি দিয়েই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৭
আরএ